এ ভাবেই বাড়ির বাইরে রাখা হয়েছে যুবককে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
আমপানের দাপটে বৃদ্ধের ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে লন্ডভন্ড। পঞ্চায়েত থেকে একটি ত্রিপল পেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, তা দিয়ে ছাউনি দেবেন। মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেই ত্রিপল দিয়ে আপাতত বৃদ্ধের মহারাষ্ট্র ফেরত তিন ছেলেকে গৃহ নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গাইঘাটার গ্রামে বাড়ি বৃদ্ধের। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, উঠোনের এক কোণে একটি কাঠের খাট। পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া ত্রিপলটি খাটের উপরে বাঁশ দিয়ে বেঁধে ছাউনি দেওয়া। তার মধ্যে বৃদ্ধের তিন ছেলে লুঙি পড়ে শুয়ে আছেন। পরিবারের লোকজনও তাঁদের সংস্পর্শে আসছেন না। দূর থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। শৌচাগার পানীয় জলের কল আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের আলাদা করে দিয়ে বৃদ্ধ মানসিক ভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু রোগের সঙ্গে আপোষ করতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরের চাল পড়ে ঠিক করতে পারব। কিন্তু সংক্রমণ ঠেকানোটাই এখন জরুরি।’’
বৃদ্ধের এমন কাজে খুশি গ্রামবাসী। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও তারিফ করছেন। গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘উনি খুবই সচেতন মানুষ। সকলের শেখা উচিত।’’ স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, নিভৃতবাসের যে উদাহরণ তৈরি করেছেন ওই বৃদ্ধ, তা সত্যিই দেখার মতো।
প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটা ব্লকে ইতিমধ্যেই ২১ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকেরা গাইঘাটায় ফিরছেন। সরকারি ভাবে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের ঠাকুরনগরে পিআর ঠাকুর গর্ভমেন্ট কলেজে থার্মাল স্ক্রিনিং করে স্কুলে তৈরি হওয়া নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা আসছেন, তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছেন। অভিযোগ, অনেকেই গোপনে বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। গ্রামবাসীর সংস্পর্শে আসছেন।
বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা অনেক ক্ষেত্রে জোটবদ্ধ ভাবে নির্মীয়মাণ বা পরিত্যক্ত বাড়িতে থাকছেন। তবে ওই বৃদ্ধ সত্যিই ভাল কাজ করেছেন। মানুষ এমন সচেতন হলে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো অনেক সহজ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy