ছবি: প্রতীকী।
তেলঙ্গানায় তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে খুনের পরে অভিযুক্তদের মৃত্যু হয়ে পুলিশের এনকাউন্টারে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণধর্ষণের শিকার বহু মহিলা ও তাঁদের পরিবার এনকাউন্টার-তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল করছেন। অনেকেরই বক্তব্য, মামলার অনেক সময়ে অভিযুক্ত ধরা পড়লেও মামলার নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর কেটে যায়। এই সময়ে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয় নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারকে। অনেক সময়ে হুমকির মুখে পড়তে হয় লাগাতার। কাজেই অভিযুক্তকে গুলি করে নিকেশ করে দেওয়ার পদ্ধতিকেই অনেকে কার্যকর মনে করেন।
তবে সমস্ত মামলাই যে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে, তা নয়। ধর্ষণের ঘটনায় তিনমাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে সাজা ঘোষণা হয়েছে, এমন উদাহরণ আছে বনগাঁ মহকুমা আদালতে।
বাগদার বাসিন্দা তেরো বছরের কিশোরীকে বাড়িতে এসে ধর্ষণ করেছিল পরিচিত এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর সকালে। মেয়েটি তার পাঁচ বছরের ভাইকে নিয়ে বাড়িতে ছিল। প্রসেনজিৎ পাণ্ডে নামে এক যুবক চড়াও হয়। ভাইকে ভুলিয়ে পাশের ঘরে নিয়ে যায়। পরে পাশের ঘরে এসে কিশোরীর মুখ-হাত-পা চেপে ধর্ষণ করে পালায়।
ঘটনার পরের দিন থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ওই দিনই প্রসেনজিৎকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ৫ ডিসেম্বর এক মাসের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দেয়। ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ সালে আদালতে মামলার শুনানি শুরু হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বনগাঁ মহকুমা আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘পকসো আইনে এ রাজ্যে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার ঘটনা ছিল ওটিই প্রথম। ১৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ফরেন্সিক রিপোর্টের প্রয়োজন হয়নি। মেডিক্যাল অফিসারের রিপোর্ট থেকে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।’’
বনগাঁ মহকুমা আদালতে শিশু-কিশোরী ধর্ষণের ক্ষেত্রে বা শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিশেষ পকসো আদালত চালু হয়েছে বছর তিনেক আগে। তারপর থেকে পকসো আইনের মামলাগুলি দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি হচ্ছে। ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের মধ্যে পকসো আইনের মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সমীর। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ পকসো আদালত তৈরি হওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে মামলা শেষ করে সাজা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সাক্ষীদের দ্রুত সাক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে সাক্ষীরা প্রভাবিত হওয়ার সময় কম পাচ্ছেন। পুলিশও দ্রুততার সঙ্গে চার্জশিট দিচ্ছে। দু’বছরে প্রায় ১২টি ঘটনায় পকসো আইনে সাজা দেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু নাবালিকার ক্ষেত্রে যে দ্রুততার সঙ্গে পকসো আদালতে বিচার হচ্ছে, তা অন্য ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না কেন?
সমীরের দাবি, তাঁরা সে চেষ্টাই করেন। তবে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়। ধর্ষণ বা গণধর্ষণের মামলা চলাকালীন অনেক সময়ে আইও (ইনভেস্টিগেটিং অফিসার), মেডিক্যাল অফিসার বদলি হয়ে যান। তাঁরা সময় মতো সাক্ষ্য দিতে আসেন না। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে আদালতে হাজির করাতে হয়। ফরেন্সিক রিপোর্ট আসতে দেরি হয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের কাছে নির্যাতিতার পরিবার ও সাক্ষীরা অনেক ক্ষেত্রে ভেঙে পড়েন। অনেক সময়ে নির্যাতিতার পরিবার অভিযুক্তদের সঙ্গে আদালতের বাইরে ‘রফা’ সেরে নেন বলেও জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। তা ছাড়া, এই সব মামলার জন্য আলাদা আদালত না থাকায় শুনানির তারিখ পর পর পাওয়া যায় না বলেও সমস্যা হয়।
ধর্ষণ বা গণধর্ষণের মামলায় অনেক সময়ে অভিযোগ ওঠে, পুলিশ চার্জশিট দিতে দেরি করছে? কেন এমন হয়?
পুলিশ কর্তাদের দাবি, ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে না গ্রেফতার করা পর্যন্ত চার্জশিট দেওয়া যায় না। কারণ, অভিযুক্তকে ধরে তার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। মেডিক্যাল পরীক্ষায় দেখা হয়, অভিযুক্ত বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটাতে সক্ষম কিনা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এমন অনেক বৃদ্ধের নামেও ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়, শারীরিক কারণে যাঁর পক্ষে এ ধরনের অপরাধ করা সম্ভব নয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, সহমতের ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক হলে সেটি ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না। ফলে এই সব ক্ষেত্রে মামলার গুরুত্ব থাকে না। অনেক সময়ে দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনার ৬-৭ মাস পরে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। অভিযুক্ত পালিয়ে যেতে পারে।
সমীর বলেন, ‘‘ধর্ষণের মামলাগুলি আমরা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পুলিশকে বলেছি, পনেরো দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে। তা হলে ছ’মাসের মধ্যে সাজা ঘোষণা করার সুযোগ থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy