Advertisement
E-Paper

আসছে না আলোর বরাত, আঁধারে ডুবে চন্দননগর

তাঁদের অনেকেরই মতে, চন্দননগরের আলোর ব্যবহার হল একটা পরম্পরা বা ঐতিহ্য। কিন্তু করোনাকালে মণ্ডপে নানা রকম বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের অনেকেই সেই পরম্পরায় এ বার দাঁড়ি টেনেছেন।

এ বার পুজোয় হয়তো দেখা যাবে না এমন আলোকসজ্জা। ফাইল চিত্র

এ বার পুজোয় হয়তো দেখা যাবে না এমন আলোকসজ্জা। ফাইল চিত্র

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৬
Share
Save

থিমের সঙ্গে লড়াই করেই প্রতি বছর ওঁরা টিকিয়ে রাখেন নিজেদের ঐতিহ্য। আলোর ভেল্কিতে শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন সাম্প্রতিক ঘটনাবলী। কিন্তু করোনা আবহের পুজোয় শহর কি এ বার ভাসবে চন্দননগরের আলোকসজ্জায়?

করোনাজয়ীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি—এলইডি-র কারিকুরিতে দৃশ্যকে কতটা জীবন্ত করা যায়, তা-ই দেখছিলেন প্রৌঢ় আলোকশিল্পী বাবু পাল। প্রশ্ন শুনে কাজ থামিয়ে বললেন, ‘‘শ্রীভূমি ও মুর্শিদাবাদের একটা কাজ পেয়েছি। ওদের জন্য করোনা-আলো তৈরি করছি ঠিকই, কিন্তু করোনার কারণেই চন্দননগরের প্রায় ৮০ শতাংশ শিল্পী এখনও কাজ পাননি।’’ আর সেই কারণেই এ বছর শহর ও শহরতলির রাস্তাঘাট একদা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরের আলোয় কতটা ঝলমল করবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ওই আলোকশিল্পীরা। তাঁদের সংশয় যে অমূলক নয়, তা মানছেন পুজোর উদ্যোক্তারাও।

তাঁদের অনেকেরই মতে, চন্দননগরের আলোর ব্যবহার হল একটা পরম্পরা বা ঐতিহ্য। কিন্তু করোনাকালে মণ্ডপে নানা রকম বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের অনেকেই সেই পরম্পরায় এ বার দাঁড়ি টেনেছেন। একডালিয়া এভারগ্রিনের কর্মকর্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মণ্ডপের আলো একই রকমের থাকবে। রাজস্থানের জয়পুর থেকে এ বারও ঝাড়লন্ঠন আসবে। কিন্তু রাস্তায় অনেক গেট বা আলোকসজ্জা ততটা হবে না। কারণ, জনসমাগম কতটা হবে, সেটা যেমন প্রশ্ন, তেমনই বেশি আলো দিলে তা দেখতে ধাক্কাধাক্কিও হবে। করোনার সময়ে সেটা ঠিক নয়।’’ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আলোর রোশনাই কমানোর উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু।

সাধারণত, থিমের পাশাপাশি আলোর খেলা দেখতেই দর্শনার্থীরা সন্ধ্যায় ও রাতের দিকে মণ্ডপে বেশি ভিড় করেন। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতিটা অন্য রকম। এ বার দিনেও যাতে লোকজন প্রতিমা দর্শন করেন, সে দিকে জোর দিতেই আলোর চাকচিক্য কম করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন শাশ্বতবাবু। উদ্যোক্তাদের এ হেন পরিকল্পনার ধাক্কাতেই এখনও একটিও কাজের বরাত আসেনি বলে জানালেন চন্দননগরের আর এক শিল্পী পিন্টু মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, এ বছর ‘ফোর-ডি’ আলোকসজ্জার জন্য মার্চ থেকে কাজ শুরুর পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। গত বছর সিংহী পার্ক এবং উত্তর শহরতলির নেতাজি কলোনি লো ল্যান্ডের পুজো ভেসেছিল পিন্টুর আলোয়। নেতাজি কলোনির কর্মকর্তা দিলীপনারায়ণ বসু বললেন, ‘‘দুর্গাপুজো একটা আবেগ। তাই সেটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সামাজিক দায়িত্ব ও বাজেট কমাতে চন্দননগরের আলো এ বার বন্ধ রেখেছি।’’

শহরের দুর্গাপুজোয় চন্দননগরের আলো প্রথম এনেছিল কলেজ স্কোয়ার। সেখানকার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সাহা জানাচ্ছেন, পরম্পরা ধরে রাখতে এ বছর কিছুটা হলেও তাঁরা চন্দননগরের আলোকসজ্জা রাখবেন। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে চন্দননগরের পথে হাঁটবেন না বলেই জানালেন সিংহী পার্ক পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ভাস্কর নন্দী। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে আলোর কারুকাজ দেখতে এক জায়গায় অনেকে ভিড় করেন। তাতে দূরত্ব-বিধি লঙ্ঘিত হবে।’’ চন্দননগরের আলো না আনলেও প্রতি বছর নিজেরাই বিভিন্ন আলোর খেলায় এলাকা ভরাতেন চালতাবাগানের পুজোর উদ্যোক্তারা। কিন্তু আলো দেখতে মানুষ যাতে সন্ধ্যায় বা রাতে ভিড় না করেন, তার জন্য আলোকসজ্জা প্রায় বাদই রাখছেন তাঁরা। এমনটাই জানালেন কর্মকর্তা অশোক জয়সওয়াল।

শহর থেকে কাজের বরাত বিশেষ না মেলায় এ বছর নতুন কারিকুরি নিয়ে ভাবার তাগিদ হারিয়েছেন আলোকশিল্পী কাশীনাথ দাস।হিন্দুস্থান পার্ক, বরাহনগরের ন’পাড়া দাদাভাই সঙ্ঘ এবং বারুইপুর থেকে কাজ মিললেও আলোর বহর অনেক কম বলেই দাবি চন্দননগরের ডুপ্লেক্স পল্লির শিল্পী অসীম দে-র। বললেন, ‘‘অন্য বছর যে পরিমাণ আলো হয়, এ বার তা নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। আর অর্ধেক শিল্পী এখনও কাজই পাননি।’’ তবে ২০২১-এ ভাল কিছুর আশায় এ বছরের আলোয় তিনি ফুটিয়ে তুলছেন ‘করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা!’

Durga Puja Light Chandannagar Light Hindusthan Park দুর্গাপুজো আলো College Square

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।