Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

গতি এল না বাজারে

বসিরহাটের শম্পা, রাজীব, কঙ্কনারা ঠিক করেছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে সকাল সকাল কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু বাধ সাধে বৃষ্টি। ভোর থেকেই জোরে হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়।

বেজার: এল না খদ্দের। খবরের কাগজের পাতায় ডুবে সময় কাটাচ্ছেন ভাঙড়ের ব্যবসায়ী। ছবি: সামসুল হুদা

বেজার: এল না খদ্দের। খবরের কাগজের পাতায় ডুবে সময় কাটাচ্ছেন ভাঙড়ের ব্যবসায়ী। ছবি: সামসুল হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:০৯
Share: Save:

বাজারে টাকার জোগানের অভাবের কথা বার বারই নানা আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছিল। পুজোর কেনাকাটা তেমন জমছে না বলে আগে থেকেই জানাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। পুজোর আগে শেষ রবিবারে জেলায় জেলায় বাজারগুলিতে ঘুরেও ভিড় তেমন চোখে পড়ল না। তার উপরে বাধ সেধেছে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে জমজমাট কেনাকাটা না হওয়ায় কার্যত হাত হতাশ অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

বসিরহাটের শম্পা, রাজীব, কঙ্কনারা ঠিক করেছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে সকাল সকাল কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু বাধ সাধে বৃষ্টি। ভোর থেকেই জোরে হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে বৃষ্টির দাপট। অগত্যা বাতিল হয় কেনাকাটার পরিকল্পনা।

দুপুরের পর অবশ্য বৃষ্টি কমে। সন্ধ্যার দিকে একটু একটু করে মানুষ রাস্তায় বের হতে শুরু করেন। তবে কেনাকাটার ভিড় আশানুরূপ নয় বলেই জানান বসিরহাটের টাউনহল চত্বরের পোশাক বিক্রেতা রতন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর আগে শেষ রবিবারে বিক্রিবাটা ভালই হয়। তবে এ বার বৃষ্টির জন্য কিছুই হল না।’’ রবিবার বসিরহাটের হাটবার। পুরাতন বাজার এলাকায় এ দিন করে হাট বসে। বৃষ্টির জন্য এ দিন জমেনি হাটও।

বনগাঁ, হাবড়ার এ বার পুজোর বাজার প্রথম থেকেই মন্দা। ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, মহালয়ার পর থেকে ভিড় বাড়বে। বাস্তবে অবশ্য তেমনটা হয়নি। রবিবারও জমেনি বাজার। এ দিন দুপুরে বনগাঁ, হাবড়ার কাপড়ের দোকানগুলিতে দেখা গেল, হাতেগোনা কয়েক জন ক্রেতা। তবে সন্ধ্যায় ভিড় কিছুটা বাড়ে।

হাবড়ার বস্ত্র ব্যবসায়ী নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার ব্যবসার হাল খারাপ। মরসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের হাতে পয়সা নেই। ফলে গ্রামের মানুষের ভিড় নেই। আজ তো সকাল থেকে দোকান ফাঁকা।’’ বনগাঁয় যশোর রোডের দু’পাশে কাপড়ের দোকান, মল, নামী সংস্থার দোকান রয়েছে। এ দিন বেশিরভাগে দোকানেই আশানুরূপ ভিড় হয়নি। মতিগঞ্জ এলাকায় একটি বিউটি পার্লারে গত বছর এই সময় ভিড় উপচে পড়ত। এ বার তেমন ভিড় জমেনি। কাঁচরাপাড়া স্টেশন-লাগোয়া নিউ বিবেকানন্দ মার্কেট, হকার্স কর্নার, আনন্দ বাজারেও সকালের দিকে বেশ ফাঁকাই ছিল। বেলায় বৃষ্টি কমতে ভিড় বাড়তে শুরু করে। বড় সংস্থার শো-রুম, বিভাগীয় বিপণিগুলিতে সন্ধের দিকে ভালই ভিড় হয়। সকালের বৃষ্টুর পরে শেষবেলায় হাসি ফেরে ব্যবসায়ীদের। তাঁদের আশা পুজোর আগে পর্যন্ত এই ভিড় থাকবে।

ডায়মন্ড হারবার শহরে স্টেশন বাজারের মুখ থেকে এক দিকে হাসপাতাল মোড়, অন্য দিকে জেটিঘাট মোড় পর্যন্ত সার দিয়ে পোশাকের দোকান। ব্যবসায়ীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন পুজোর আগের সময়টার জন্য। কিন্তু এ বার সেই আশায় জল ঢেলেছে ক’দিনের টানা বৃষ্টি। রবিবারেও বদলায়নি ছবিটা। এমনিতেই ধস নামায় ডায়মন্ড হারবারে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ। ফলে রায়দিঘি, কুলপি, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর জয়নগর, কুলতলি ও কাকদ্বীপ এলাকার ক্রেতাদের একাংশ এ বার আর এ দিকে আসছেন না। তার উপরে টানা বৃষ্টির ফলে স্থানীয় ক্রেতারও অনেকে মুখ ফিরিয়েছেন বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

ডায়মন্ড হারবারের মেইন রোড ব্যবসায়ী সমিতির তরফে শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করছি। এমন বাজার কোনও দিন দেখিনি। প্রতি বছর পুজোর আগে শেষ রবিবার ক্রেতাদের চাপে নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতাম না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার গমগম করত। এ বার যা অবস্থা, তাতে শ্রমিকদের বেতন দেওয়াই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

বৃষ্টির মধ্যেও এ দিন ভাঙড়ের প্রাণগঞ্জ বাজার, বিজয়গঞ্জ বাজার ও ঘটকপুকুর বাজারের ব্যবসায়ীরা সকাল সকাল দোকান খুলেছিলেন। আশা ছিল, কয়েক দিনের মন্দা কাটিয়ে শেষ রবিবারে অন্তত ভাল ব্যবসা হবে। কিন্তু এ দিনও বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ কাপড়ের দোকান, ইমিটেশনের দোকান, সোনার দোকান-সহ অন্যান্য দোকান প্রায় ফাঁকা। বস্ত্র ব্যবসায়ী মানস সর্দার বলেন, ‘‘পুজোর দু’তিন সপ্তাহ আগে থেকে ভাল বেচাকেনা হয়। অন্যান্য বার এই সময়ে দিনে ৪০-৫০ হাজার টাকার বেচাকেনা করেছি। কিন্তু এ বার দু’তিন হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। শেষ রবিবারটাও বাজার ফাঁকা।’’ জয়নগর এলাকার একটি শপিং মলে গিয়ে কিন্তু দেখা গেল, বাজার খারাপ সেখানেও। স্টেশনের কাছে নবনির্মীত মলের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘পুজোর বাজার একেবারেই আশানুরূপ নয়। রবিবারে যে রকম আশা করা হয়েছিল, সকালের দিকে তো তার প্রায় কিছুই ছিল না। বিকেলে বৃষ্টি কমায় কিছু ক্রেতা আসছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Business Rain Durga Puja 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy