বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারের ভাগাড় থেকে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। নিজস্ব চিত্র
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর দুটো। নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনের পাশ দিয়ে খালের দিকে হেঁটে যাওয়ার পথে হঠাৎই নজরে এল, চা রদিক ধোঁয়ায় ভরা। ডিসেম্বরের দুপুরে কি তা হলে কুয়াশা হল?
আচমকা ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া লোকজনের মনে এমন সংশয় তৈরি হওয়া অমূলক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, ধোঁয়ার উৎস কী? সংশয় কাটালেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরাই দেখালেন, কিছুটা দূরের ‘পাহাড়’ ভেদ করে কুণ্ডলী পাকিয়ে বেরিয়ে আসছে ধোঁয়া। সঙ্গে কটু গন্ধ। সামান্য এগোতেই দেখা গেল, আবর্জনার ভাগাড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরোচ্ছে ওই ধোঁয়া। আবর্জনা জ্বালাতেই কি তা হলে আগুন ধরানো হয়েছে?
ভাগাড়ে কর্মরত লোকজন থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন,বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারের ভাগাড় থেকে বেরোনো ওই ধোঁয়ার উৎস মিথেন গ্যাস। দীর্ঘ দিন ধরে স্তূপীকৃত বর্জ্যের ভিতরে জমে থাকা মিথেন গ্যাস বাতাসের সংস্পর্শে আসায় আগুন ধরে যাচ্ছে। সেই ধোঁয়াই ছড়াচ্ছে চার দিকে। নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনের পাশেই রয়েছে ঝুপড়ি বসতি। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যেই চার দিক কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। আর হাওয়া দিলে কটু গন্ধে টেকা দায় হয়ে ওঠে। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, শীতে ও গরমকালে ধোঁয়া বেশি হয়।
কিন্তু ওই ধোঁয়া তো ক্ষতিকর? কলোনির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ধোঁয়া বেরোতে শুরু করলে বাইরে বেশি ক্ষণ থাকি না। দরজা-জানলা বন্ধ করে দিই। তবে অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে।’’ বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ৫০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে রয়েছে এই ভাগাড়। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পুরসভার আবর্জনা ফেলা হত সেখানে। তা থেকেই ধীরে ধীরে পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে ভাগাড়টি। তবে এখন বরাহনগর, দমদম, উত্তর দমদম ও দক্ষিণ দমদম— এই চারটি পুরসভার আবর্জনা ফেলা হয় সেখানে। ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে বরাহনগর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা। সেখানকার কর্তাদের দাবি, যখন বেশি ধোঁয়া বেরোয়, তখন দমকলকে খবর দেওয়া হয়। দমকল আগুন নেভানোর ফলে ধোঁয়ার তীব্রতা কমে যায়।
ভাগাড়ের স্তূপীকৃত বর্জ্যের (লেগ্যাসি ওয়েস্ট) প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করতে বছর তিনেক আগে রাজ্যগুলিকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশআদালত। তার পরে অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও তৎপরতা শুরু হয়। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর (সুডা) সূত্রের খবর, বিভিন্ন পুর এলাকায় স্তূপীকৃত বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেএমডিএ-কে। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারের ভাগাড়েও তার প্রথম ধাপ চলছে। জানা যাচ্ছে, সুডার তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে দিয়ে রিফিউজ় ডিরাইভড ফুয়েল বা আরডিএফ (তরল জ্বালানি) তৈরি করা হচ্ছে। যা ওড়িশার বিভিন্ন সিমেন্ট তৈরির কারখানায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দিলীপনারায়ণ বসু জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্জ্য পৃথকীকরণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করে তা থেকে জৈব সার তৈরি হবে। বছর দুয়েকের মধ্যে ওই ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তার পরেও যে বর্জ্য পড়ে থাকবে, তা দিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে ‘স্যানিটারি ল্যান্ড ফিলিং’ বা জমি ভরাট করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে যে যেমন খুশি আবর্জনা এনে ওখানে জমা করে রাখত। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করেন। তাতেই সুসংহত ভাবে বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প চলছে।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘শুধু বেলঘরিয়া নয়, যে কোনও ভাগাড়েই এই মিথেন গ্যাস বেরোয়। এখন সর্বত্রই সুসংহত ভাবে প্রক্রিয়াকরণের কাজটি সবে শুরু হয়েছে। তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে জাতীয় পরিবেশ আদালতের হস্তক্ষেপেই এটা হয়েছে। না হলে হত না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, পরিবেশ-বিধি মেনে সর্বত্র কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হলে জায়গাও কম লাগবে। দূষণও কমবে। তিনি এটাও বলছেন, ‘‘বাতিল বর্জ্য দিয়ে জমি ভরাটের ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। সেগুলিও মেনে চলতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy