—ফাইল চিত্র
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ভোগান্তির নালিশ উঠছে নানা জায়গা থেকেই।
কিছু দিন আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভাঙে হিঙ্গলগঞ্জ থানার বাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর আব্দুররব গাজির। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায় পরিবার। ওই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সম্পূর্ণ সুবিধা পাওয়ার কথা। তবে আব্দুররবের স্ত্রী নার্গিস বিবির দাবি, ২ ডিসেম্বর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, অস্ত্রোপচার করার আগে পর্যন্ত সব খরচ পরিবারকে দিতে হবে। তারপরের খরচ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে পাওয়া যাবে। সমস্যায় পড়ে পরিবার। নার্গিস জানান, প্রথমে তাঁদের বলা হয়েছিল, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ৫ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার করার আগেই আবার ১১,৯০০ টাকা জমা করতে বলা হয়।
কিন্তু দরিদ্র পরিবারের কাছে তখন টাকা না থাকায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ রাজি হয়, অপারেশনের পরের দিন টাকা নিতে। ৬ ডিসেম্বর ধারদেনা করে নার্গিস টাকা জমা দেন। ১২ ডিসেম্বর ছুটি হয় আব্দুররবের। অভিযোগ, সব মিলিয়ে যে ১৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল তাঁদের থেকে, তার কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি। শুধু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ৬০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে একটি বিল দেওয়া হয়। তবে কিসের জন্য কত টাকা নেওয়া হয়েছে, বিলে তা উল্লেখ ছিল না বলেই দাবি। নার্গিস বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ড গত বছর করেছিলাম। ভেবেছিলাম খুব সুবিধা হবে। কিন্তু নিজেদের থেকেই যখন এত টাকা দিতে হল, তা হলে আর কী সুবিধা হল!”
হাসনাবাদের এক আশাকর্মীর অভিজ্ঞতাও একই রকম। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি তাঁর গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। আশাকর্মী হিসেবে তিনি আগেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের জন্য বিভিন্ন নার্সিংহোমে যোগাযোগ করেন স্বামী। তাঁর কথায়, “ব্যারাকপুরের একটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা দেয় না বলে জানায়। অথচ তাদের নাম স্বাস্থ্যসাথীর তালিকা থেকেই পেয়েছিলাম।”
এরপরে বারাসতের এক নার্সিংহোমে যোগাযোগ করেন তিনি। সেখানে অস্ত্রোপচারের খরচে ১৭ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়। বাকি খরচ দিতে হবে পরিবারকেই। শেষ পর্যন্ত কার্ড ছাড়াই বসিরহাটের একটি নার্সিংহোম থেকে অপারেশন করান। ওই আশাকর্মীর স্বামী বলেন, “এই প্রথম স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা নিতে গেলাম। আর এই তিক্ত অভিজ্ঞতা হল। আর এই কার্ড নিয়ে আগ্রহী নই।”
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের ভান্ডারখালির বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক উজ্জ্বল বারুই জানান, ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুতে তাঁর স্ত্রীকে সন্তান প্রসবের সময়ে সেখানকার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রথমে বলা হয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে। ভর্তি নেওয়ার পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও সুবিধা নেই।
হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি পঞ্চায়েত বাসিন্দা বুদ্ধদেব মণ্ডল জানালেন, ২০১৭ সালে অসুস্থ হয়েছিলেন। চিকিৎসায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছিল, তবে বেসরকারি জায়গায় কোনও কাজে আসেনি।’’ বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরার সময়ে নদীতে কার্ডটা ফেলে দিয়েছিলাম।”
হাসনাবাদ থানার বিশপুরের বাসিন্দা গোবিন্দ মাখাল বলেন, “আমার মা ২০১৫ সালে অসুস্থ হন। তখন ওই কার্ড কোনও কাজে আসেনি। কোনও নার্সিংহোম বিনামূল্যে অপারেশন করায়নি। তাই জমি বিক্রি করে অপারেশন করাই। তবে দেরি হয়ে গিয়েছিল মাকে বাঁচাতে পারিনি। কী লাভ হল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে?”
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, “কার্ড নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে থানায় বা স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ দায়ের করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” হিঙ্গলগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অঙ্কুর কর্মকার বলেন, “হিঙ্গলগঞ্জের কোনও বাসিন্দার সঙ্গে যদি এমন ঘটনা হয়ে থাকে, আমাদের জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy