ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের কারণে গত এক বছর ধরে ধুঁকছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোল বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতি। সেই ক্ষত মেরামতের আগেই আবারও ধাক্কা। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার সোমবার থেকে নতুন করে দেশব্যাপী সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে।
তার জেরেই এ রাজ্যের বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতি ধাক্কা খেতে চলেছে বলে মনে করছেন বন্দর-অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত মহল। বনগাঁ মহকুমায় ভারী শিল্প নেই। কয়েক হাজার মানুষ পেট্রাপোল বন্দরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্দরের অর্থনীতি মূলত নির্ভর করে দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি এবং মানুষের যাতায়াতের উপরে।
পেট্রাপোল অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর লকডাউনের আগে পর্যন্ত প্রতি দিন পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। গত বছর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাত্রীদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত ছিল।
কয়েক মাস আগে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত শুরু হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। কারণ, এখনও ট্যুরিস্ট ভিসা, ই-ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। রবিবার দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন ১,৯২৬ জন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত সংখ্যাটা ৬৫৮ জন। অন্য দিন দুপুর পর্যন্ত সংখ্যাটা থাকে প্রায় ৯০০। সোমবার মূলত বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়রা এবং ভারতে থাকা বাংলাদেশিরা দেশে ফিরেছেন।
অভিবাসন দফতরের কর্তারা মনে করছেন, মঙ্গলবার থেকে যাত্রী যাতায়াত আরও কমবে। এ দিন যে সব ভারতীয় বাংলাদেশ থেকে ফিরেছেন, তাঁদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে গণ পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পেট্রাপোল বন্দরে হোটেল ব্যবসা, পরিবহণ ব্যবসা, মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা ধুঁকছে। অনেকেই ছোটখাটো দোকানি। তাঁদের অবস্থাও তথৈবচ। সোমবার দুপুরে পেট্রাপোল বন্দরে গিয়ে দেখা গেল, কার্যত সুনসান পেট্রাপোল বন্দর। ব্যস্ততা কার্যত নেই। অনেক দোকানপাট বন্ধ। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলি যাত্রীদের অভাবে ফাঁকা। বাস, অটো বা অন্য যানবাহন স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। হোটেলে লোকজনের ভিড় নেই। মালপত্র বহন করা শ্রমিকেরা বসে গল্পগুজবে ব্যস্ত। অভিবাসন, শুল্ক দফতরের সামনে ছিল না দেশে ফেরার যাত্রীদের লম্বা লাইন।
দীর্ঘ দিনের মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কার্তিক ঘোষ। ফাঁকা কাউন্টারে বসে বললেন, ‘‘গত বছর কার্যত ব্যবসা বন্ধ ছিল। অক্টোবর থেকে কিছু যাত্রী যাতায়াত শুরু করেন। বাংলাদেশে ফের লকডাউনের জেরে সোমবার থেকে রুজিরোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’’ এক হোটেল ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘একদিনে কর্মীদের বেতন ও জ্বালানির খরচ ২ হাজার টাকা। নতুন করে লকডাউনের ফলে যাত্রী আসবে না। খরচ উঠবে না।’’ পেট্রাপোল থেকে কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য বন্দরে রয়েছে বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার বাস পরিষেবা। সেই ব্যবসা থমকে গিয়েছে। এক পরিবহণ কর্মী জানালেন, যাত্রী না এলে বাস চলার উপায় নেই। বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মালিকেরা এ দেশে লকডাউন চলাকালীন ইতিমধ্যেই কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে বেতন আরও কমতে পারে বলে কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা।
যাত্রীদের মালপত্র বহন করতে বন্দরে রয়েছেন শ্রমিকেরা (কুলি)। যাত্রীদের অভাবে তাঁরাও কর্মহীন হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘আগের বার লকডাউনে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছি। এ বার বাংলাদেশে ফের লকডাউন। কত দিন লকডাউন চলবে তা তো বুঝতে পারি না। আমরা দিন আনি দিন খাই। জমা টাকায় কত দিন সংসার চালাতে পারব জানি না।’’
যাতায়াতে প্রভাব পড়লেও পণ্য বাণিজ্য অবশ্য স্বাভাবিক ছিল সোমবার। গত বছর ৭৫ দিন বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ দিন দুপুর পর্যন্ত ১৪০টি ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোলে গিয়েছে। বাণিজ্যে এখনও প্রভাব না পড়লেও বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দিনে প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বন্দর এলাকা, পণ্য পরিবহণ লকডাউনের আওতা থেকে বাদ দিয়েছেন। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ এ দেশ থেকে যাওয়া ট্রাক চালক-খালাসিদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সকলেই পিপিই পরে যাচ্ছেন। বেনাপোলে স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
তবে এ দিনও দেখা গেল, বন্দরে আসা লোকজনের বেশির ভাগই মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। এ দেশেও যে ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে সকলের আরও সাবধান হওয়া উচিত বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। নতুন করে এ দেশে লকডাউন ঘোষণা হলে বিপদ বাড়তে পারে সব মহলেই, এই তাঁদের আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy