ফাইল চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকে বাড়ছে শিশুদের অপুষ্টি। করোনা পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ। শিশুদের রান্না করা মিড ডে মিলের খাবার বিতরণের কাজ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অপুষ্টিতে ভুগছে মিনাখাঁ সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, বাদুড়িয়া, হাসনাবাদ-সহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বেশ কিছু শিশু। এরই পাশাপাশি আছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় আইসিডিএস কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ছ’বছরের নীচে শিশুর সংখ্যা সাড়ে ৬ লক্ষ। প্রসূতি ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সংখ্যা ১ লক্ষের কিছু বেশি। রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ গত বছর থেকে। আগে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে এলাকার প্রতিটি শিশুকে স্কুলে বসিয়ে পুষ্টিকর আনাজযুক্ত খিচুড়ি, ফল ও ডিম খাওয়ানো হত। বর্তমানে তা না হওয়ায় কিছু শিশু অপুষ্টিজনিত সমস্যার মধ্যে পড়ছে। এখন কেন্দ্রগুলি থেকে কেবল ডাল-চাল দেওয়া হয়। মাঝে কয়েক মাস তা-ও বন্ধ ছিল।
মিনাখাঁ ব্লকের ৩৮০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৪ হাজার শিশুকে রান্না করা পুষ্টিকর ও সুষম খাবার বসিয়ে খাওয়ানো হত। প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি মিনাখাঁয় অপুষ্ট শিশুর সন্ধান মিলেছে। বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এবং সিলিকোসিসে আক্রান্ত এলাকাগুলিতে এ ধরনের শিশু পাওয়া গিয়েছে। মিনাখাঁর বিডিও শেখ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা প্রতি মাসে রিপোর্ট সংগ্রহ করি। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। আগামী দিনে এই শিশুদের কী ভাবে উপযুক্ত পুষ্টি দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা বিশেষ আলোচনা করেছি। খুব শীঘ্রই অপুষ্টিতে ভোগা ওই শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের উপযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা হবে।’’
বাদুড়িয়ার সিডিপিও সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়িতে গিয়ে শিশুদের কী ভাবে পুষ্টি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বোঝানো হচ্ছে। অতিরিক্ত অপুষ্টির কারণে কোনও শিশু অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য বলা হচ্ছে।’’
হিঙ্গলগঞ্জে অগস্ট মাসে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৬। প্রশাসন তৎপর হয়ে শিশুদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ব্লকে ৩৪ জন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। অন্য দিকে, সন্দেশখালি ২ ব্লকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কিনতু বার বার যোগাযোগ করা হলেও স্পষ্ট তথ্য নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি।
সন্দেশখালি ১ ব্লকে এখন অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ৫০-এর আশপাশে। হাসনাবাদে ব্লকে অগস্ট মাসে এই সংখ্যা ছিল ৪০। সেটা সেপ্টেম্বর মাসে হয়েছে ৪৫। তবে প্রশাসনের দাবি, চেষ্টা করা হচ্ছে, শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির। একমাসের মধ্যে সংখ্যা অনেকটা কমবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। রুজিরোজগার বন্ধ। স্বাভাবিক ভাবে বাড়িতে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দিতে পারছেন না। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জেলার বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। ভাড়া বাড়ি, ক্লাবঘর, মন্দির-মসজিদ বা কারও বাড়ির বারান্দায় বেশ কিছু কেন্দ্র চলছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বাদুড়িয়া ব্লকে মোট ৪২৩টি কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। বাকিগুলি চলছে ভাড়া বাড়ি, কারও বাড়ির বারান্দা বা ক্লাবঘরে। নিজস্ব ভবন থাকা কেন্দ্রগুলিও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্রমশ পরিকাঠামো খারাপ হচ্ছে।
হাড়োয়া ব্লকে ৩৬৫টি কেন্দ্র আছে। মাত্র ১২৫টির নিজস্ব ঘর আছে। সিডিপিও সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব দ্রুত কেন্দ্রের নতুন ভবন হবে বাদুড়িয়ায়। আরও ৩৩টি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জেলায়। হাড়োয়া ব্লকে ৩০টি ভবন করার প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy