Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
WB assembly election 2021

‘চাষার ব্যাটা’র জন্য ক্রমশ রুক্ষ হয়েছে ভাঙড়ের জমি

গত পাঁচ বছর ধরে রাজনীতির লড়াইয়ের শেষে কী পেলেন মানুষ? প্রতিশ্রুতি পালনে কতটা সাফল্য এল বিধায়কের ঝুলিতে? কী বলছে জনতা? বিরোধীদেরই বা বক্তব্য কী— এ সবেরই খতিয়ান জানাবে রিপোর্ট কার্ড। আনন্দবাজারের পাতায় শুরু হল বিধানসভাভিত্তিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন।ঝাঁ চকচকে নিউটাউন লাগোয়া কেন্দ্র হওয়ায় ভাঙড়ের অনুন্নয়ন আরও চোখে পড়ে।

ভাঙড়ের শোনপুর থেকে হাতিশালা পর্যন্ত বেহাল এই রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ আছে মানুষের । নিজস্ব চিত্র।

ভাঙড়ের শোনপুর থেকে হাতিশালা পর্যন্ত বেহাল এই রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ আছে মানুষের । নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৩০
Share: Save:

হেলা ধরতে না পারার অক্ষমতা নিয়ে যারা কেউটে ধরতে গিয়েছিল বলে কটাক্ষ করেছিলেন রেজ্জাক, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরতে সময় লাগেনি। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। দীর্ঘ দিনের বামঘরানা ছেড়ে কাঁধে গামছা ফেলে ‘চাষার ব্যাটা’ তৈরি করেন নতুন সংগঠন। এক সময়ে জায়গা করে নেন তৃণমূলে। দীর্ঘ দিনের ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তখন তাঁকে ঘিরে নানা সমালোচনার ঝড় বাম শিবিরে। কেন্দ্র বদল করে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে ভাঙড় আসনে প্রার্থী করেন তৃণমূল নেত্রী। জিতেও যান রেজ্জাক।

শুরুতে বলেছিলেন, ব্যাটে বলে ছক্কা মারবেন। তবে ভাঙড়ের পিচে খেলতে নেমে বার বার নিজেই নাস্তানাবুদ হয়েছেন, মনে করেন তাঁর দলের নেতাদের অনেকেই। একে তো তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ ভাঙড়ে দলের ভিতরে ঐক্য আনতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। তার উপরে, ভাঙড়ে জমি আন্দোলনের সময়েও ব্যাটে-বলে বিশেষ রান ওঠেনি তাঁর। অনুন্নয়নের অভিযোগও ভুরি ভুরি। তার উপরে এলাকায় মাথা তুলছে আব্বাস সিদ্দিকি গোষ্ঠী। প্রায় ৭৭ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সেই শক্তিকে সামলাতে তৃণমূলের অন্দরেও চাপ প্রবল।

সব মিলিয়ে ২০২১ সালের ভোটে ভাঙড় কেন্দ্রের দিকে নজর সব পক্ষেরই।

ঝাঁ চকচকে নিউটাউন লাগোয়া কেন্দ্র হওয়ায় ভাঙড়ের অনুন্নয়ন আরও চোখে পড়ে। রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে বিধায়ক থেকে শুরু করে এলাকার নেতাদের বার বার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে এখানে। ভাঙড় ২ ব্লকের বামনঘাটা পঞ্চায়েতের কোঁচপুকুর গ্রামে দিদিকে বলো কর্মসূচিতে রেজ্জাক মোল্লার সামনেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। সব নেতাদের এক জায়গায় হাজির করানো যাচ্ছে না বলে সে দিন সকলের সামনেই স্বীকার করতে হয়েছিল রেজ্জাককে।

উন্নয়নের প্রশ্নে বিধায়কের সাফাই, তাঁর আমলেই ভাঙড়ের অধিকাংশ রাস্তাঘাট সংস্কার হয়েছে। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের জন্য পাইপ লাইনের কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই মানুষের বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছে যাবে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। লো ভোল্টেজের সমস্যা মিটেছে। নলমুড়ি, জিরানগাছা ব্লক হাসপাতালের পাশাপাশি ভাঙড়ের নলমুড়িতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে।এত সবের পরেও ভোটের অঙ্কে অবশ্য তৃণমূল এখানে নিজের জায়গা ধরে রেখেছে গত কয়েকটি ভোটে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ের ১৯ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে তারা। যদিও সন্ত্রাস, হুমকি এ সবের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি ভাঙড়ে। তবু তারই মধ্যে অনুন্নন নিয়ে বিরোধীরা লাগাতার বিঁধে চলেছে তৃণমূলকে। সিন্ডিকেটরাজ, তোলাবাজির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতাদের।

গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী তথা ভাঙড় ২ ব্লকের মণ্ডল সভাপতি অবনী মণ্ডল বলেন, ‘‘রেজ্জাক মোল্লা ভাঙড়ের মানুষের জন্য কিছুই করেননি। কোনও উন্নয়ন করেনি। ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিটি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, চাষিদের জন্য হিমঘর তৈরি করে দেবেন। সেটুকুও করতে পারেননি। নেতাদের কাটমানি, তোলাবাজি বন্ধ করে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। সিন্ডিকেটরাজ বন্ধ করবেন বলেছিলেন। কিছুই করতে পারেননি।’’গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রশিদ গাজি বলেন, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ বরাবরই বঞ্চিত। সাংসদ থেকে বিধায়ক সকলেই বহিরাগত। ভাঙড়ের মানুষ তাঁদের কাছ থেকে শংসাপত্র থেকে শুরু করে কোনও পরিষেবাই পান না। ভাঙড়ের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সর্বত্রই অনুন্নয়নের ছবি ফুটে ওঠে।’’

কী বলছেন রেজ্জাক নিজে?

তাঁর কথায়, ‘‘আমি চেষ্টা করেছি। ভাঙড়ের অধিকাংশ রাস্তাঘাটের সংস্কার করেছি। কিছু ক্ষেত্রে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে সব কাজ করা সম্ভব হয়নি। আমি চেষ্টা করেছি, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে সকলকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার।’’ যাঁদেরকে এক ছাতার তলায় আনার এই চেষ্টা, দলের সেই অংশের নেতা আরাবুল ইসলাম রাখঢাক না করেই বললেন, ‘‘রেজ্জাক মোল্লা প্রতিশ্রুতি পুরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’

ভাঙড়ের জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান বলেন, ‘‘রেজ্জাক মোল্লা ভাঙড় থেকে জেতার পরে তাঁকে ভাঙড়ের মানুষ সে ভাবে পাশে পাননি। ’’

সব মিলিয়ে পাঁচ বছর পরে কঠিন জমিতেই নামতে হতে পারে রেজ্জাককে।

অন্য বিষয়গুলি:

WB assembly election 2021 CPM TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy