সন্দেশখালিতে মহিলাদের বিক্ষোভ (বাঁ দিকে)। পুলিশের সঙ্গে বচসায় বিজেপি প্রতিনিধি দল। — নিজস্ব চিত্র।
অশান্তি রুখতে সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকায় চলছে পুলিশের টহলদারি। তবে শনিবার সকালে নতুন করে আবার উত্তেজনা ছড়ায় সন্দেশখালির সিতুলিয়া গ্রামে। বিক্ষোভরত মহিলাদের অভিযোগ, ভুজঙ্গ দাস নামে এক গ্রামবাসীর বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। এই হামলার ঘটনায় পুলিশের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। অন্য দিকে, সন্দেশখালি থানায় যাওয়ার পথে রামপুরের কাছে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে পুলিশ আটকে দেয়। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না বলে স্পষ্ট জানায় পুলিশ। যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বচসা চলে।
বুধবার রাত থেকেই উত্তপ্ত সন্দেশখালি। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারকে গ্রেফতারির দাবিতে পথে নেমেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা। শিবুর একাধিক পোল্ট্রি ফার্ম, বাগানবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা।
বৃহস্পতি এবং শুক্রবারও একই ছবি দেখা যায় সন্দেশখালিতে। বাঁশ, দা, কাটারি নিয়ে রাস্তায় নামেন মহিলারা। ঘেরাও করা হয় সন্দেশখালি থানা। শুক্রবার সারা দিন ধরেই দফায় দফায় সন্দেশখালি থানার সামনে যৌথ ভাবে বিক্ষোভ দেখায় জমি রক্ষা কমিটি এবং আদিবাসীদের সংগঠন। পুলিশের সঙ্গে সমানে বচসা চলে।
দাবি না মানলে, থানার সামনে থেকে অবস্থান তুলবেন না বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। তবে শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বিক্ষোভ উঠে গেলেও বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি ছিল, শনিবার আবার আন্দোলনে শামিল হবেন তাঁরা। এর পর শুক্রবার রাতেই বাহিনী দিয়ে সন্দেশখালি থানা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। শুরু হয় রুটমার্চ। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরাও শুক্রবার রাতের মধ্যেই সন্দেশখালি পৌঁছন। এর পর সন্দেশখালি থানা এলাকায় ১৪৪ ধরা জারি করে পুলিশ।
শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি থমথমে ছিল। রাস্তাঘাটও শুনশান। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফের নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। অভিযোগ, শুক্রবার সন্দেশখালি থানার সিতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভুজঙ্গ দাসের বাড়িতে চড়াও হয় কয়েক জন। বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এমনকি, ঘর থেকে বাইরে এনে ভুজঙ্গকে মারধর করার অভিযোগও উঠেছে। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভ সরিয়ে দেয়। এলাকায় মাইকিং চালাচ্ছে তারা।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে সন্দেশখালি যাওয়ার পরিকল্পনা নেয় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো নবদ্বীপ জেলার বিজেপি পর্যবেক্ষক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, বসিরহাট জেলা বিজেপির সভাপতি তাপস ঘোষ এবং বিজেপি নেত্রী অর্চনা মজুমদার-সহ ২৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল সন্দেশখালি ঢুকতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। রামপুরের কাছে আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি চলে দীর্ঘ ক্ষণ। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি ছিল, অন্তত তাঁদের মধ্যে থেকে চার জনকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হোক।
যদিও পুলিশ বিজেপির প্রতিনিধি দলের সেই দাবি মানেনি। পুলিশ তাদের জানায়, ১৪৪ ধারা জারি করা এলাকায় কোনও ভাবেই কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। তাঁরা গ্রামে গেলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াতে পারে। শেষ পর্যন্ত গ্রামে ঢুকতে না পেরে রামপুর থেকেই ফিরতে হয় বিজেপির প্রতিনিধি দলকে।
এই প্রসঙ্গে নবদ্বীপ জেলার বিজেপি পর্যবেক্ষক কৃষ্ণেন্দু বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। আমাদের বেআইনি ভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছিলাম চার জন যাব। থানায় গিয়ে আমরা কথা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা গেলে নাকি আইনশৃঙ্খলা ব্যাঘাত ঘটবে। তাই যদি হয়, তবে চার-পাঁচ দিন ধরে কী করছিল পুলিশ? আমাদের পূর্বপরিকল্পিত কর্মসূচি জোর করে বাতিল করেছে। আমাদের দলের কর্মীদের উপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy