সাগরমেলা চলাকালীন পূর্ণিমার ভরা কটালে ফের ভাঙনের আশঙ্কা করছেন জেলা প্রশাসনের একাংশ এবং ব্যবসায়ীদের অনেকে। আজ, সোমবার সেই কটাল রয়েছে। কাল, মঙ্গলবার ভোরে রয়েছে ‘পুণ্যস্নান’। জেলা প্রশাসনের দাবি, ফের ভাঙন হলে তৎক্ষণাৎ মেরামতির জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত দাবি করেছেন, ‘‘ভয়ের কিছু নেই। গত বারের মতো পূর্ণিমার কটালে এ বারে আর ভাঙন হবে না। তবুও আমরা সেচ দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলেছি। কিছু হলে দ্রুত যাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।’’ জেলা প্রশাসনের আর এক আধিকারিক জানান, সাগরমেলা শেষ হলেই সমুদ্রতটের ভাঙন আটকাতে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, বছরের শুরুতে এটাই প্রথম পূর্ণিমার কটাল। সাগরমেলা চলাকালীন ভাঙন আটকাতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। প্রায় এক হাজার মাটির বস্তা প্ৰস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া, আরও পাঁচ হাজার মাটির বস্তা তৈরির ব্যবস্থা রয়েছে। শালবল্লাও মজুত রাখা হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং গত কয়েকটি পূর্ণিমার কটালে বার বার ভাঙনের কবলে পড়েছে কপিলমুনি মন্দিরের সামনের সমুদ্রতট। বিভিন্ন সময়ের কটালে সমুদ্রতটের কংক্রিটের রাস্তা-সহ ১ নম্বর থেকে ৪ নম্বর স্নানঘাট সমুদ্রে তলিয়ে যায়। মেলার আগে পুণ্যার্থীদের স্নানের উপযোগী ঘাটগুলি ফের তৈরি করা হয়েছে।
সোমবারের কটালে ভাঙন দেখা দিলে, মেলা পরিচালনায় যেমন অসুবিধা হতে পারে, তেমনই পুণ্যার্থীদের মকরসংক্রান্তির স্নানের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ফি বছর যে ভাবে গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটের ক্ষতি হচ্ছে, তাতে দ্রুত সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করা গেলে আগামী দিনে চাষের জমি থেকেই মাটি কেটে এখানে ফেলতে হবে। এখন সমুদ্রতট থেকে মন্দিরের দূরত্ব কমে হয়েছে প্রায় ৫০০ মিটার।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, বারবার ভাঙনের ফলে ঘাটের কাছে জল চলে আসে। তখন দোকানও ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়। এই পরিস্থিতিতে ‘পুণ্যস্নানের’ দিন ভরা কটালের কারণে ব্যবসা শিকেয় উঠবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁরা জানান, ঘাটের উপরের অংশে তাঁরা বসতে পারেন না। জলে তট ডুবে গেলে অন্যত্র মালপত্র সরিয়ে রাখারও সুযোগ নেই। গত সোমবার সাগরমেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কপিলমুনির মন্দিরের কাছে ভাঙন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ভাঙন আটকানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরের প্রধান জ্ঞানদাস মোহন্তের কাছে আবেদন জানান। মন্দির কর্তপক্ষ সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ কপিলমুনি মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জেলাশাসকের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে। তাতে সেচ-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা থাকবেন। মন্দির কমিটি কী ভাবে ভাঙন আটকানোর কাজ করবে। এ ছাড়া তাঁরা কত টাকা এই কাজের জন্য বরাদ্দ করবেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকতে মেলায় এসেছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও দফতরের সচিব মনীশ জৈন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)