ভিড়: কপিলমুনির মন্দিরের সামনে জমায়েত। ভাঙল দূরত্ব বিধি। নিজস্ব চিত্র
অতিমারির বাড়বাড়ন্তে গঙ্গাসাগর মেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মেলা ঘিরে বিশাল জমায়েত হলে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ইতিমধ্যে ৫২টি মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মেলার আয়োজন এখনও চলছে জোরকদমেই।
৮ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলার উদ্বোধন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ভিন্ রাজ্যের পুণ্যার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। মুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসেল পেরোনোর সময়ে শারীরিক দূরত্ব বিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না তাঁদের। মাস্কও চোখে পড়ছে না অনেকের। কচুবেড়িয়া থেকে বাসে গঙ্গাসাগর পৌঁছনোর পরে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেল, বহু পুণ্যার্থীর মাস্ক নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন গত বছর গঙ্গাসাগর মেলায় ই-স্নানের আয়োজন করেছিল। এ বছরও সেই ব্যবস্থা থাকছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক পি উলগানাথন। কিন্তু মেলায় জমায়েত বন্ধ করা হবে কিনা, তা নিয়ে স্পষ্ট উত্তর নেই জেলা প্রশাসনের কাছে।
মঙ্গলবার মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেল, দূরত্ব বিধি মাথায় না রেখেই বহু মানুষ সমুদ্রে নেমে স্নান করছেন। কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময়েও দূরত্ব বিধি মানা হচ্ছে না। তা নিয়ে প্রশাসনিক কড়াকড়িও চোখে পড়ল না।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোভিড বিধি মানার জন্য কপিলমুনি মন্দিরের সামনে একটি প্রচার-গাড়ি রাখা হয়েছে। সেখানে ভিন্ন ভাষায় মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। প্রশাসন, পুলিশের তরফে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে সাগরের বিভিন্ন বাসস্টপে। দোকানদার এবং মেলার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকে মাস্ক ছাড়া যেন কেউ মেলায় যাতে প্রবেশ না করেন, সেই নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে।
লট ৮, কচুবেড়িয়া ঘাট এবং মেলার বিভিন্ন প্রান্তে স্যানিটাইজ়ার টানেল বসানোর কথা জানিয়েছে প্রশাসন। থাকছে থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থা। এদিন মেলা প্রাঙ্গণে গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানা ও জিবিডিএ-র উদ্যোগে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে দেখা গেল, দূরত্ব বিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকেরা স্যানিটাইজ়ারের বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু পুণ্যার্থীকে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে।
যাঁরা মাস্ক ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকছেন, তাঁদের মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা প্রাঙ্গণে দোকানদারদের বলা হয়েছে, মাস্ক ছাড়া কেউ দোকানে এলে কিছু বিক্রি করা যাবে না। দোকানদারদেরও মাস্ক পরতে হবে।
স্থানীয় সিপিএম নেতা স্বপন সিংহ বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগরের মানুষ হিসেবে উৎকণ্ঠায় আছি। রাজ্য সরকার খেলা-মেলা করে করোনা বাড়িয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলার উপরে যদি বিধি-নিষেধ জারি না করে, তা হলে করোনার প্রকোপ খুবই বেড়ে যাবে। বাইরের রাজ্য থেকে বহু মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। প্রশাসন পদক্ষেপ করছে না। সাগরে ভয়ঙ্কর ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’
মঙ্গলবার দুপুরে ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা গঙ্গাসাগর মেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। দেবাশিস বলেন, ‘‘আমরা এখানে একশো শতাংশ টিকাকরণ করে ফেলেছি। গঙ্গাসাগর মেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রায় শেষ পর্যায়ে। কোভিড সংক্রমণের কথা চিন্তা করে আমরা টাস্ক ফোর্স গঠন করেছি। এই ফোর্স পুরো এলাকা ঘুরে দেখবে, কোভিডের কোনও সমস্যা আছে কিনা। বিশেষ করে যে সমস্ত পুণ্যার্থী মেলা প্রাঙ্গণে আসছেন, সে দিকটি খতিয়ে দেখা হবে। গঙ্গাসাগরে থাকছে সেফ হোম, নিভৃতবাস, টিকাকরণ কেন্দ্র।’’
কপিলমুনি মন্দিরের পুরোহিত মহন্ত সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘যে ভক্তেরা আসবেন, তাঁরা যেন দূরত্ব বিধি মেনে চলেন এবং মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখেন। যে ভাবে সংক্রমণ আগের থেকে বেড়েছে, রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy