—ফাইল চিত্র
দেশ জোড়া সাধারণ ধর্মঘটের প্রভাব পড়ল না পেট্রাপোলে। সকাল থেকেই আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানির কাজ। খোলা ছিল বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলিও।
বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি খুলেছিল। পরিবহণ শ্রমিকেরা কাজ করেছেন। খোলা ছিল, সাধারণ দোকান, হোটেল, বাজার। বাস, অটো-সহ সমস্ত যানবাহন চলাচল করেছে। বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে লোকজন অবশ্য কম এসেছেন।
কয়েক বছর আগেও বন্ধের দিন বন্দর এলাকার চিত্রটা উল্টো থাকত। সুনসান পরিবেশ, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুই বন্ধ থাকত। বাংলাদেশি যাত্রীরা এ দেশে এসে বন্দরে আটকে পড়তেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাঁদের দুর্ভোগের স্বীকার হতে হত। বন্ধ সমর্থনকারীরা সকালে সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউজ কর্পোরেশনের গোডাউনের গেটে দলীয় পতাকা ঝুলিয়ে দিতেন। গোডাউন থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক বেরোতে-ঢুকতে পারত না।
রাজনৈতিক দলগুলি বা শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ বন্ধ তো বটেই, স্থানীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে ডাকা বন্ধেও পেট্রাপোল স্তব্ধ হয়ে যেত। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষতি হত। ব্যবসায়ীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। অলিখিত একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল, বনগাঁ মহকুমায় বন্ধ ‘সফল’ করতে হলে, বন্ধ সমর্থনকারীদের লক্ষ্য ছিল পেট্রাপোলে বাণিজ্যের কাজ বন্ধ করা। এর ফলে বন্দর সম্পর্কেও দেশের ব্যবসায়ী মহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।
শুল্ক দফতরের অনুমোদিত সংগঠন পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-সহ কয়েকটি সংগঠনের তরফে যে কোনও বন্ধের আওতা থেকে বন্দর এলাকাকে বাইরে রাখতে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। ওই সব সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের কাছে অনুরোধ করা হতে থাকে, তাঁরা যেন বন্ধের আওতা থেকে বন্দরকে বাদ রাখেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও একই দাবি তোলা হয়েছিল। প্রথম দিকে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। ধীরে ধীরে অবশ্য পরিস্থিতিটা বদলাতে থাকে। সংশ্লিষ্ট সকলেই বন্ধের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে বুঝতে পারে। এরপর থেকে গত আট বছর ধরে বন্ধে স্বাভাবিক থাকে পেট্রাপোল বন্দর।
রাজ্যে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে পেট্রাপোল বন্দরে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সিটু ছেড়ে বহু শ্রমিক শাসক শিবিরে নাম লেখান। ঘোষিত ভাবে তৃণমূল বন্ধের বিরোধী। স্বাভাবিক ভাবেই শ্রমিকদের বড় অংশ বন্ধে সামিল হতে বিরত হতে থাকেন। ব্যক্তিগত ভাবে শ্রমিকেরা চাইতেন কাজ করতে। ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকত না। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। শ্রমিকেরা বন্ধের দিনে কাজ করছেন। তারই প্রভাব দেখা গিয়েছে সোমবার। সাংগঠনিক ভাবে কংগ্রেস ও বামেরা এখানে দুর্বল। বন্ধে প্রভাব না পড়ার এটিও একটি কারণ।
বুধবার কংগ্রেস ও বামেদের পক্ষ থেকে বন্দর এলাকায় বন্ধের সমর্থনে মিছিল-মিটিং করতেও দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘সকলে বুঝে গিয়েছেন, এখানে বন্ধ সফল করা সম্ভব নয়। ফলে বন্ধ সমর্থনকারীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।’’ পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে আট বছর ধরে বন্দর এলাকাকে বন্ধের বাইরে রাখতে পেরেছি। স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে এই বন্দর দিয়েই ভারতের সব থেকে বেশি বাণিজ্য হয়। বছরে ২০ হাজার কোটি টাকায় ব্যবসা হয়। বন্ধে বন্দর স্বাভাবিক থাকায় দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে সদর্থক বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছি আমরা।’’
পেট্রাপোল ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘একদিন বাণিজ্য বন্ধ থাকলে রফতানিকে ট্রাক বন্দরের গোডাউনের রাখতে হলে ১০০০-১৪০০ টাকা ডিটেনশন চার্জ হিসাবে দিতে হয়। পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরে বন্ধে বন্দর স্বাভাবিক থাকায় পণ্য আমদানি রফতানিকারী আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বন্দর নিয়েও ব্যবসায়ীরা উৎসাহ পাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy