এ ভাবেই মাথা গোঁজার জায়গা করে নিয়েছেন এঁরা। নিজস্ব চিত্র
ভেসেছে গ্রাম। ভেঙে গিয়েছে বাড়ি। জলের তোড়ে সবই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বছর পাঁচেকের শিশুটি তার পুতুলের জন্য মন খারাপ করে বসে আছে। আর বাবা-মা বাড়ি কবে ঠিক হবে, তার প্রতীক্ষায়। আপাতত পুরো পরিবারের ভরসা বাঁধের উপরে ত্রিপল টাঙানো একফালি মাথা গোঁজার ছাউনিটুকু।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি পঞ্চায়েতের বাইনাড়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই এখন বাঁধের উপরে এ ভাবেই আশ্রয় নিয়েছেন। আমপানের পর থেকে বিধ্বস্ত গ্রাম। ছন্নছাড়া জীবন।
নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বাইনাড়া-সহ একাধিক গ্রাম। মানুষ প্রাণটুকু নিয়ে ঘর ছেড়ে যে যেখানে পেরেছিলেন আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই থেকে আর ঘরে ফেরা হয়নি বহু মানুষের। বেশির ভাগেরই বাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামের স্বপন মণ্ডলও। তিনি বলেন, “ছোট্ট মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাঁধের উপরে থাকতে হচ্ছে। এ ভাবে থাকা যে কী কষ্টের, তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। কড়া রোদে ত্রিপলের ভিতরে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কোনও গাছের তলায় গিয়ে বসে থাকতে হয়। খাবার বলতে ত্রাণের থেকে যেটুকু পাই। তা-ও রোজ জোটে না।’’
বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে তাঁদের। ফের যদি ঝড়ো হাওয়ায় সব উড়ে যায়। শক্ত করে ত্রিপল ধরে বসে থাকতে হয়। বাচ্চা মেয়েটা ভয়ে তখন কান্নাকাটি জুড়ে দেয়, জানালেন স্বপন।
এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুরের কাজ করেন। কেউ কেউ নিজের সামান্য জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে দিনমজুরের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর চাষের জমি ভেসে যাওয়ার পরে যাঁরা নিজের সামান্য জমিতে চাষ করে পেট চালাতেন, তাঁরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাইনাড়া গ্রামের কেওড়াতলি পাড়ার বাসিন্দা শচীন বাউলিয়া দেড় বিঘা জমিতে চাষ করে চারজনের সংসার চালাতেন। এখনও ফসল জলের নীচে। আর তাঁর একচিলতে মাটির বাড়িটির কোনও হদিসই নেই।
আমপানের তাণ্ডবে শুধু গ্রামের ক্ষতি হয়নি বহু মানুষের রুজিরোজগারও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তপন মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা বলেন, “৫২ হাজার টাকা দিয়ে অটো কিনেছিলাম লকডাউনের আগে। মাসে ৬ হাজার করে দেওয়ার কথা ছিল। এক মাস চালানোর পরে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। এরপরে আমপানের রাতে নদীর জলে ডুবে থেকে অনেক ক্ষতি হয়েছে অটোর। এখন আবার শোরুম থেকে ইএমআই-এর জন্য চাপ দিচ্ছে। অথচ এখন আমার কাছে ১০০ টাকাও নেই।”
এমনই অসহায় অবস্থা বাঁধের উপরে থাকা সমস্ত গ্রামবাসীর। অনেকের অভিযোগ, এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। সন্ধ্যা মণ্ডল, মনীষা মণ্ডল, শচীন মণ্ডলরা বলেন, “এখনও কোনও আর্থিক সাহায্য পাইনি। সরকারি ভাবে ত্রিপল, কয়েক কেজি চাল পেয়েছি মাত্র।’’
সরকারি টাকা না পেলে মাটির বাড়ি করার ক্ষমতাও নেই তাঁদের। এ ভাবে বাঁধের উপরে থাকা ছাড়া উপায় নেই। হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, “হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে ঘরের টাকা পৌঁছনো শুরু হয়েছে। সমস্ত তথ্য পাঠানো হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি নিশ্চয়ই দ্রুত টাকা পাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy