গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে যুবকদের আলোচনা। নিজস্ব চিত্র।
মিজানুর গাজি: আলামিন, এ বার তো নতুন ভোটার হলি। কেমন লাগছে?
আলামিন গাজি: জীবনে প্রথম বার ভোট দেব ভেবে ভালই লাগছে। তবে সেই ভাল লাগা থেকে বেশি এখন চিন্তা কাজ পাওয়া নিয়ে। দেখতে দেখতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ। এত দিন শ্রমিকের কাজ করে পড়াশোনা চালিয়েছি। কিন্তু গ্রামে তেমন কোনও কাজ নেই, যেখান থেকে বেশি উপার্জন হয়। সে জন্যই তো বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে আমিও তামিলনাড়ু চলে যাচ্ছি।
মিজানুর: সে কী! আর পড়াশোনা করবি না?
আলামিন: জানি না কী করব। আপাতত কাজ করে কিছু উপার্জন করতে হবে, বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল বের হলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে গ্রামে তো তেমন কোনও কাজ নেই যে, কাজের সঙ্গে কলেজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব।
আকিব জাভেদ: ঠিক, গ্রামে কর্মসংস্থান দরকার। ভোট আসছে, যাঁরাই পঞ্চায়েত চালান না কেন গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার।
মিজানুর রহমান গাজি: শুধু শিক্ষিত বেকারদের নয়, গ্রামের সব স্তরের মানুষ যাতে কাজের সুযোগ পান তার ব্যবস্থা করা দরকার।
আলামিন: আমার মা বিড়ি শ্রমিক। কিন্তু অনেক দিন ধরে একই মজুরি। হাজার বিড়ি বাঁধলে মাত্র ২০০ টাকা মজুরি মেলে। বিড়ি শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো দরকার।
মিজানুর: এই পঞ্চায়েত এলাকায় বহু পুরুষ ও মহিলা বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। তাঁদের দিকটা সত্যিই ভেবে দেখা দরকার।
মিজানুর রহমান: ঘূর্ণি বাঁশতলা থেকে বায়লানি পর্যন্ত গ্রামের প্রধান রাস্তা দীর্ঘ দিন বেহাল। এর সংস্কার দ্রুত প্রয়োজন। এই রাস্তা দিয়েই তো বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জল আনতে যেতে হয় বহু মানুষকে। রাস্তা খারাপ থাকার ফলে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়।
মিজানুর: জন্মের পর থেকে এত বছর কেটে গেল কখনও পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা হতে দেখলাম না। হয় জল কিনে খেতে হয়, না হলে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে জল আনতে হয়। পানীয় জলের এই কষ্ট যে কবে দূর হবে জানি না।
সাইফুল গাজি: সব বাড়িতে এ বার পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। দেখা যাক, কবে আসে পানীয় জল। আমাদের ব্লক সুন্দরবন এলাকার মধ্যে পড়ে। ফলে আমপান ও ইয়াসে পর পর দু’বার গ্রামের মধ্যে থাকা ডাঁসা নদীর বাঁধ একাধিক জায়গায় ভেঙে গিয়েছিল। অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়ে ক্ষতি হয়েছে বহু মানুষের। এই নদীবাঁধ যদি কংক্রিটের করা যায় খুব ভাল হয়।
মিজানুর: বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে একাধিক রাস্তারও ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণি শকুন্তলা থেকে দুর্গাপুর স্লুস গেট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তাটি যেমন। এই রাস্তার সংস্কার জরুরি। এ ছাড়া, একাধিক রাস্তা সংস্কার দরকার। ২৪ বিঘা এলাকার বেশ কিছু পরিবারে আজও পাকা শৌচাগার নেই। তাঁরা বেশ সমস্যা আছেন বলে শুনেছি। যাঁরাই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আসুক গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন করা দরকার।
সাইফুল: তবে আমাদের গ্রামে এখন বিদ্যুৎ আছে সব বাড়িতে। যদিও একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এই বিষয়টিও নজর দেওয়া দরকার।
মিজানুর রহমান: রাতে কেউ অসুস্থ হলে খুব সমস্যা হয়। প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হয় সেই টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে বা প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সান্ডেলেরবিল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। গ্রামে ২৪ ঘণ্টার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা হলে সুবিধা হত।
আলামিন: গ্রামে অনেকে ফুটবল খেলেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। অনেকে বসিরহাট বা কলকাতায় প্রশিক্ষণ নিতে যায়। গ্রামে একটা ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হলে যে কী ভাল হয়!
মিজানুর: গ্রামের পাশে যে সব স্কুল আছে, সেখানে অনেকগুলি শিক্ষকপদ শূন্য। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার উপযুক্ত স্কুল একটা থাকলেও সেখানে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই শিক্ষক পদ পূরণ হলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
আকিব: গ্রামে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রও নেই। অনেকে গান, নাচ, আবৃত্তি শিখতে চায়। তারা তেমন সুবিধা পায় না। তেমন একটা কেন্দ্র হলে বেশ হয়।
মিজানুর: পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে যেন কোনও অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি না হয়, সেই কামনাই করি। শান্তিপূর্ণ ভাবে সকলে ভোট দিক, এই প্রত্যাশা করব সব রাজনৈতিক দলের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy