প্রতীকী ছবি।
‘‘রাতে নিশ্চিন্তে নিজের ঘরে ঘুমানোর অধিকারটুকুও কি আমাদের নেই?’’—বৃহস্পতিবার দুপুরে দত্তপুকুর থানার সামনে এই বলে গর্জে উঠলেন বছর তিরিশের তরুণী মৌসুমি দে। এ দিন সকালে রান্নাবান্না ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন মৌসুমির মতো অনেক বাড়ির মেয়ে-বৌরা। তাঁদের মিছিল যখন এগোচ্ছে থানার দিকে, ভিড়ে পা মেলালেন এলাকার পুরুষেরাও। পথে হাঁটতে হাঁটতেই সন্দীপ চৌধুরী নামে এক যুবক বললেন, ‘‘খুন, ধর্ষণের এই পরিস্থিতি কবে আর বদলাবে!’’
বছর ছ’য়েক আগে এই দত্তপুকুরের বামনগাছিই সাক্ষী সমাজবিরোধীদের আর এক তাণ্ডবের। সে দিন এলাকায় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় খুন হয়েছিলেন সৌরভ চৌধুরী নামে এক কলেজ ছাত্র। মাঝ রাতে সৌরভকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে রেললাইনের পাড়ে দেহাংশ ছড়িয়ে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা।
এ দিন মিছিলে হাঁটা সন্দীপ সৌরভ চৌধুরীরই দাদা। মঙ্গলবার গভীর রাতে বধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রতন দাস ওরফে তোতাই ছিল সৌরভ খুনের অন্যতম অভিযুক্ত। যদিও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় সে। অভিযুক্তদের আরও কেউ কেউ প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সৌরভের পরিবার৷ আইনি লড়াই এখনও চলছে। সৌরভ খুনের পরে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়। নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। বারাসত, বামনগাছি, দত্তপুকুর এলাকায় দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। দল গড়ে পালা করে এক সময়ে রাত জাগতেন সন্দীপ, ছোটকা, মৌসুমিরা। কিন্তু এত কিছুর পরেও দত্তপুকুরের বামনগাছিতে দুষ্কৃতীদের যে রমরমা রয়েই গিয়েছে, বর্ষশেষের রাতে গণধর্ষণের ঘটনায় সে কথাই ফের প্রমাণ হল বলে মনে করেন সৌরভের মা। ‘‘তবে এ ভাবে ঘুমিয়ে থাকলে, চুপ থাকলে চলবে না’’— স্মারকলিপিতে সই করতে করতে বললেন প্রিয়াঙ্কা কর। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের তো ইচ্ছে করছে, যারা এ সব করেছে, তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলতে। কিন্তু এটা তো সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। তাই আমরা মিছিল করছি, স্মারকলিপি দিচ্ছি। আইন হাতে তুলে না নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি। আমরা চাই ঘটনার বিচারের পরে দোষীরা দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি পাক।’’ মিছিলে পা মেলানো সদ্য আঠারোর কলেজ ছাত্রী সোমা রায় বলেন, ‘‘লড়াই লাগাতার চালাতে হবে, সেটা মনে হয় আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। ফলে বামনগাছিতে ফের এত বড় ঘটনা ঘটে গেল।’’ সোমা বলেন, ‘‘আমরা গোটা বামনগাছি এলাকায় মিছিল করব। আগের মতো পাহারা দেওয়া শুরু করব। আমাদের ঘর, আমাদের মা-বোনকে তো আমাদেরই আগলে রাখতে হবে।’’ সন্দীপও বলেন, ‘‘আবার পথে নামছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy