Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে তবেই গ্রামে ঢুকলে ভাল, দাবি মানুষের 

হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি ব্লকের বহু মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন। অনেকেই বাড়ি ফিরে আসছেন।

ছবি এপি।

ছবি এপি।

নির্মল বসু ও সামসুল হুদা 
বসিরহাট ও ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৫:১৯
Share: Save:

বিদেশ কিংবা ভিনরাজ্য থেকে এখন অনেকেই গ্রামে ফিরছেন। তাঁদের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কিনা, তা নিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। তবে সকলেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে এমনটা নয়। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পাড়া-পড়শিরা।

হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি ব্লকের বহু মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন। অনেকেই বাড়ি ফিরে আসছেন। তাঁদের নিয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন সর্বক্ষণ তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

যোগেশগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ভ্যানচালক গৌতম মণ্ডল, ব্যবসায়ী হরেন মণ্ডল, সন্তোষ মণ্ডল, ধনঞ্জয় মণ্ডলদের প্রশ্ন, এই এলাকার অনেকেই বেঙ্গালুরু, কেরল, তামিলনাড়ুতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিছু মানুষ ফিরেছেন। তাঁদের শরীরে এই সংক্রমণ নেই তো? আদৌ তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে কি?

গ্রামে স্বাস্থ্যপরীক্ষার শিবির করা হোক বলে দাবি তুলছেন অনেকেই।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ১৬৯ জন বাস করেন। এর মধ্যে সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ মানুষ সংসার চালাতে কাজের জন্য ভিনরাজ্যে থাকেন। কালীতলা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল খাঁ, গৌরাঙ্গ মণ্ডলরা বলেন, ‘‘ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফেরা অধিকাংশেরই তো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তাঁরা তো হাটে-বাজারে সকলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেখান থেকেও তো করোনা ছড়াতে পারে।’’

সুন্দরবনবাসীদের দাবি, যে ভাবে করোনাভাইরাস দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে ভিনরাজ্য থেকে আসা মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন। তবে যাঁরা এখনও পর্যন্ত গ্রামে ফেরত এসেছেন তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা সুস্থ আছি। শরীরে কোনও অসুবিধা নেই।’’ বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন না হলে ভিনরাজ্য থেকে আসা কারও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আশাকর্মীরা খোঁজ নিচ্ছেন, কে কেমন আছেন। হাঁচি, কাশি এবং জ্বর হলে অবিলম্বে জানাতে বলা হয়েছে। অসুস্থ হলে স্থানীয় হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। তেমন হলে চিকিৎসক গ্রামে গিয়ে ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে।’’ তিনি আরও জানান, বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ১৩টি শয্যা এবং শিবহাটি হাসপাতালে ১০টি শয্যার আইসলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আরও একটি করার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনও সে রকম সন্দেহজনক রোগী পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে ৪১ জনের একটি তালিকা বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। যাঁদের বসিরহাটে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি। তাঁদের মধ্যে ৪ জন স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরেছেন। বাকিদের হোম কোয়রান্টাইনে রাখা হয়েছে।শুক্রবার রাতে ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিমেষ হোড়ের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্তারা ভিনরাজ্য থেকে ফেরা কিছু মানুষের বাড়িতে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বলেন, বিপর্যয় এড়াতে কী কী সতর্কতা মেনে চলা উচিত।সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফেরা ভাঙড়ের গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘যে মহল্লায় থাকতাম, সেখানে করোনাভাইরাসের কারণে ফাঁকা করে দিতে বলা হয়। গ্রামে ফিরতে বাধ্য হয়েছি।’’ এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। বললেন, ‘‘বাজারঘাট না করলে খাবো কী! বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা ছাড়া তেমন কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে বেরোতে হচ্ছে।’’

চেন্নাই থেকে ফেরা অন্য একজনও সরকারি নির্দেশিকা না মেনে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। নিজেকে গৃহবন্দি রাখেননি।

তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছাড়া আর কেউ নেই। কাজে না গেলে, বাজারঘাট না করলে খাওয়া হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে সব কিছু করতে হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘কী ভাবে মানব সরকারি নির্দেশ? বাড়িতে বসে থাকলে কি প্রশাসন চাল, ডাল বাড়িতে পৌঁছে দেবে?’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ১ ব্লক এলাকায় এখনও পর্যন্ত ৭৮ জন ভিন রাজ্য থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন।ভাঙড় ২ ব্লকে এখনও পর্যন্ত এই সংখ্যাটা ৩৭ জন। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা সহ জেলার বিভিন্ন ব্লক এলাকার বহু মানুষই এখন এলাকায় ফিরছেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে জানা যাচ্ছে, অনেকেই বিদেশ থেকে আকাশপথে দিল্লি এসেছেন। তারপর সেখান থেকে ট্রেনে নিজের এলাকায় ফিরেছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওই সব যাত্রীদের সম্পর্কেও সঠিক তথ্য প্রশাসনের কাছেও নেই ।এঁরা অনেকেই নিজেকে গৃহবন্দী রাখছেন না বলে অভিযোগ। ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস রুখতে সমস্ত স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে এই মারণ ভাইরাস কোনও ভাবেই রোখা সম্ভব নয়। সরকারি নির্দেশিকা মানছেন না। আমরা তাঁদের চিহ্নিত করে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এতে যদি কাজ না হয়, তা হলে অন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিমেষ হোড় বলেন, "এই সময়ে যাঁরা বাইরে থেকে আসছেন, তাঁদের বার বার বলছি, মাত্র কয়েকটা দিন আপনারা বাইরে বের হবেন না। এটা আপনার এবং আপনার আশেপাশের মানুষের সুরক্ষার প্রশ্ন।"

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Medical Test Bhangar Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy