Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

পুকুরের জলে ঘর-সংসার

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ২ ব্লকের নৈনান পঞ্চায়েতের এনায়েতপুর গ্রামের হাজারখানেক মানুষ এ ভাবেই বেঁচেবর্তে আছেন। জানা গেল, অনেকেই পেটের অসুখে ভোগেন।

ক্ষতিকর: এই জলই খেতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। নিজস্ব চিত্র

ক্ষতিকর: এই জলই খেতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

গ্রামে একটি মাত্র নলকূপ থেকে ঘোলা জল বেরোত। সেই নলকূপও বছরখানেক ধরে খারাপ। পাইপ লাইনে যে জল আসে, তা-ও বেশ ঘোলা, দূষিত বলে অভিযোগ। কয়েক বার কেঁচো, জোঁক মিলেছে জলে! এই পরিস্থিতিতে গ্রামের পুকুর-ডোবা থেকে জল তুলে রান্নাবান্নার কাজ চালাচ্ছেন মানুষ। সেই জলেই রান্না হচ্ছে মিড ডে মিল। বাচ্চাদের জন্য তৈরি খিচুড়ির রং তাতে কালচে হয় বলে জানালেন মানুষজন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ২ ব্লকের নৈনান পঞ্চায়েতের এনায়েতপুর গ্রামের হাজারখানেক মানুষ এ ভাবেই বেঁচেবর্তে আছেন। জানা গেল, অনেকেই পেটের অসুখে ভোগেন। পেটের অসুখে ভুগে নাকি কয়েক দিন আগে এক যুবকের মৃত্যুও ঘটেছে। তবু কলকাতা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের এই এলাকায় পরিস্রুত জলটুকু মেলে না!

সত্যপীরপাড়া, বাগানপাড়া, সীতাগাছিপাড়া ও দাসপাড়া নিয়ে এনায়েতপুর গ্রাম। গ্রামবাসীরা জানালেন, সরকার বাহাদুরের নানা দফতরে দরবার করেও নলকূপ জোটেনি। ফলে কচুরিপানা সরিয়ে এঁদো পুকুর থেকে জল তুলতে হয়। সেই জল ফুটিয়ে, ফটকিরি দিয়ে খান সকলে। তবে অত ঝকমারি কি আর সব সময়ে করা যায়! তাই সরাসরি পুকুরের জল পেটে যায় অনেকেরই।

পুকুরের জলে অনেকে স্নান করেন। গরু-ছাগলকে স্নান করানো হয়। বাসন সাফ করেন অনেকেই। তবু সেই জলই ব্যবহার করতে হয়। মাস দেড়েক আগে মারা গিয়েছেন গ্রামের যুবক বাপন হালদার। তিনি পেটের অসুখে ভুগছিলেন বলে পরিবারের দাবি। মাঝে মধ্যেই পেটের অসুখে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয় লোকজনকে— এমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইনের জল তো দিনে দু’বার আসে। তাতেও কি কাজ মেটে না?

গ্রামের লোকজন জানালেন, একে তো দূষিত জল বেরোয় কল থেকে। তার উপরে, যেখানে কল, সেখানে পৌঁছতে গেলে হাঁটুজল পেরোতে হয় বছরের বেশির ভাগ সময়ে।

গ্রামে নলকুপ কী হল?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, একটি মাত্র নলকূপ থেকে জল নেওয়ার জন্য এত দিন কাড়াকাড়ি চলত। সেই নলকূপও বছরখানেক ধরে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। জল বেরোয় না। কলটুকু সারানোর লোক মেলে না পঞ্চায়েত থেকে।

নৈনান পঞ্চায়েতের এনায়েতপুর গ্রামের বিজেপি সদস্য সমীর মণ্ডলের দাবি, পাড়ায় নলকূপ বসানোর জন্য বহুবার আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘সারা গ্রামে একটা নলকূপ নেই, স্বাধীনতার সত্তর বছর পেরিয়ে এমন গ্রাম গোটা দেশে পাওয়া যাবে কিনা কে জানে!’’

পঞ্চায়েত কী কল সারাতে পারে না?

প্রধান তৃণমূলের বিজন মণ্ডল বলেন, ‘‘এখানে জলস্তর সব সময়ে নেমে যাওয়ার কারণে নলকূপ দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। শুধু ওই গ্রামে নয়, এই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা আছে।

তবে ওই গ্রামে দ্রুত জল সরবরাহের ব্যবস্থা হবে। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিডিওকে অনুরোধ করা হয়েছে।’’

সীতাগাছি পাড়ায় রয়েছে ২৮৭ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানে সকালের দিকে ৩৫ জন শিশু ও গর্ভবতী প্রসূতি আসেন। পুকুরের জলেই কচিকাঁচাদের খাবার তৈরি করতে হয়। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা শকুন্তলা দাস বলেন, ‘‘পানীয় জলের অভাবে খিচুড়ি রান্না করাই যায় না। করলে তা এমন কালচে দেখতে হয়, শিশুরা মুখে তুলতে চায় না।’’ ছোটদের খাওয়ার জন্য তিনি বাড়ি থেকে বোতলে করে আনেন বলে জানালেন।

গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা সর্দার, মমতা সর্দারদের অভিযোগ, ‘‘পুকুরের জল খেতে বাধ্য হচ্ছি। গ্রামসুদ্ধ লোক থেকে থেকে পেটের রোগে ভোগে।’’ সম্প্রতি নলকূপের দাবিতে এনায়েতপুর মোড়ে কলসি, বালতি নিয়ে অবরোধ করেছিলেন গ্রামের মেয়ে-বৌরা। পুলিশ কথা দিয়েছিল সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

মগরাহাট ২ বিডিও রথীনচন্দ্র দে বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরে গ্রামে গিয়েছিলাম। দ্রুত নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা হবে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে কথা বলে পরিস্রুত জল সরবরাহ করার ব্যবস্থাও হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Food Coocking Pond Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy