Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Rail Service

প্ল্যাটফর্মে গোল চিহ্ন আঁকতে দেখে লোকাল ট্রেন চলার আশায় মানুষ

রেলের ঠিকাসংস্থার কর্মীরা ওই কাজ করছেন। এই দৃশ্য দেখে লোকাল ট্রেন শুরু হওয়া নিয়ে আশাবাদী নিত্যযাত্রী, হকাররা।

 স্টেশনে দূরত্ববিধির চিহ্ন। হাবড়ায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

স্টেশনে দূরত্ববিধির চিহ্ন। হাবড়ায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৪
Share: Save:

সোমবার সকাল থেকে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার হাবড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, টিকিট কাউন্টারের সামনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার গোলাকার চিহ্ন আঁকা হচ্ছে। রেলের ঠিকাসংস্থার কর্মীরা ওই কাজ করছেন।

এই দৃশ্য দেখে লোকাল ট্রেন শুরু হওয়া নিয়ে আশাবাদী নিত্যযাত্রী, হকাররা। হাবড়া ছাড়াও মছলন্দপুর, গোবরডাঙা, বনগাঁ-সহ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে দূরত্ববিধি বজায় রাখার গোল চিহ্ন আঁকা শুরু হয়েছে।

লকডাউনের শুরু থেকে গত কয়েক মাস ধরে অনেকের রুজিরোজগার বন্ধ লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। প্ল্যাটফর্মের উপরে বা স্টেশন চত্বরে অনেকে দোকানপাট বসিয়ে রুজিরোজগার করেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের আনাগোনা বন্ধ। ফলে ওই সব দোকানিরাও ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে অস্থায়ী দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় ট্রেনের কামরায় হকারি করে অনেক মানুষ বেঁচে আছেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁরাও অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কিছু মানুষ ট্রেনে ভিক্ষে করেও দিন চালাতেন। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁরাও

পড়েছেন আতান্তরে।

বনগাঁ মহকুমার মানুষের কলকাতা যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ট্রেন। এখানকার মানুষ রোজ কলকাতায় যান সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় কাজের সূত্রে। বনগাঁর অনেক মহিলা রোজ ভোরে মিষ্টি নিয়ে কলকাতায় গিয়ে বিক্রি করেন, গাইঘাটার অনেক মহিলা ঠাকুরনগর ফুল বাজার থেকে ফুল কিনে কলকাতায় বিক্রি করেন। তাঁদের কাজকর্ম সব বন্ধ। তা ছাড়া, চিকিৎসা-সহ নানা প্রয়োজনে হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে করে

কলকাতা যান।

আনলক প্রক্রিয়া শুরু হতেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে গিয়েছে। মানুষকে কাজকর্ম বাঁচাতে বাধ্য হয়ে কলকাতায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাতে দুর্ভোগ, খরচ— দুই বেড়েছে। আবার বাইরে থেকে অনেক মানুষ কাজের প্রয়োজনে ট্রেনে করে বনগাঁ, হাবড়া, বারাসতে আসেন। তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। বহু মানুষ বাধ্য হয়ে বাসে যাতায়াত করছেন। কিন্তু বাসের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা দলবেঁধে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছেন।

বনগাঁ থেকে সম্প্রতি কলকাতা যাওয়ার বাস পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু বাসে করে কলকাতায় যেতে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ফলে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। অনেক সময় কলকাতায় সময় মতো পৌঁছতে না পেরে কাজ না মিটিয়ে মানুষকে ফিরে আসতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাইক নিয়ে যাতায়াত করছেন। বাইককে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি এক যুবক বাইক নিয়ে সল্টলেক যেতে গিয়ে দুর্ঘটনায় জখম হন। যুবকের কথায়, ‘‘এতটা পথ বাইকে করে যাওয়ার অভ্যাস নেই। তা ছাড়া, সংকীর্ণ যশোর রোডে বাইক চালানো মানে মৃত্যুকে সঙ্গে করে নিয়ে চলা।’’ হাবড়ার এক তরুণী ভিড় বাসে উঠতে গিয়ে বললেন, ‘‘কী করব। চাকরি বাঁচাতে এ ছাড়া বিকল্প পথও নেই। জানি যে কোনও সময়ে করোনায় আক্রান্ত হতে পারি।’’

ওই তরুণীর মতো অনেক মানুষ চাইছেন লোকাল ট্রেন চালু হোক। হাবড়া প্ল্যাটফর্মে দোকান থাকা কয়েকজন হকার বলেন, ‘‘ট্টেন বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্রেতা নেই। খুব কষ্টে দিন কাটছে। রেল কর্তৃপক্ষ প্ল্যাটফর্মে গোলাকার চিহ্ন আঁকছে দেখে মনে হচ্ছে শীঘ্রই ট্রেন চলবে। তা হলে আমরা প্রাণে বাঁচব।’’ এনআরএস হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন মানিক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন বন্ধ থাকায় যাতায়াত সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ট্রেন চলাচল শুরু হোক।’’

তবে বনগাঁ লোকালে কামরায় ভিড় দেখে মানুষ আঁতকে ওঠেন। দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। গেটে ঝুলে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যের তরফে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরে রেল পরিষেবা চালু করতে তৎপরতা শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তারই পদক্ষেপ হিসাবে গোল চিহ্ন আঁকা হচ্ছে। কবে ট্রেন চলবে তা ঠিক না হলেও এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Service Round Mark Railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE