Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Ambulance

অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হয়রানি দুই জেলাতেই

করোনা পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ উঠছে দিকে দিকে। বহু ক্ষেত্রে জ্বরের উপসর্গ থাকা রোগীকে নিতে চাইছেন না অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নির্মল বসু ও দিলীপ নস্কর
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৬:৫১
Share: Save:

করোনা আক্রান্ত বসিরহাট পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা সোমবার সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গোপালপুর কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ শুরু করেন পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, কোনও রকমে একটা অ্যাম্বুল্যান্স মিললেও করোনা-রোগী শুনে প্রথমে গাড়িতে তুলতে রাজি হননি চালক। অনেক অনুরোধে তাঁকে রাজি করানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। হাসপাতালে পৌঁছতে পৌঁছতেই মৃত্যু হয় রোগীর। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে স্বামীকে মরতে হত না।

করোনা পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ উঠছে দিকে দিকে। বহু ক্ষেত্রে জ্বরের উপসর্গ থাকা রোগীকে নিতে চাইছেন না অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। ফলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পরিবারের লোকজনকে। বসিরহাটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহকুমা জুড়ে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগী ও তাঁর আত্মীয়েরা।

বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ২টি অ্যাম্বুল্যান্স এবং ৮টি মাতৃযান আছে। আপাতত অ্যাম্বুল্যান্সগুলি করোনা রোগী এবং মাতৃযান মা ও শিশুদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনও করোনা রোগীকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে ফিরে আসতে ৬-৭ ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অন্য রোগীরা অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছেন না। করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও মিলছে না বলে অভিযোগ। জ্বর, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গের কথা বললে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

সন্দেশখালির বাসিন্দা দীপঙ্কর মাহাতো বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে কয়েক বছর ধরে ভুগছেন বাবা। কয়েক দিন আগে বাড়াবাড়ি হওয়ায় মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে কলকাতার আরজি করে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স চালককে বললেও কেউ রাজি হননি। শেষে ৪-৫ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতে হয়।’’

কেন রোগী নিতে চাইছেন না চালকরা?

অ্যাম্বুল্যান্স চালক দীপক দাস বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের কোনও পিপিই কিট দেওয়া হয়নি। গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেই। পরিবারের সুরক্ষার জন্যই করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে রোগীকে গাড়িতে তুলছি না।’’

বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার জানান, অ্যাম্বুল্যান্স পেতে রোগী সহয়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্স ও নিশ্চয়যানের জন্য যাথাক্রমে ৬২৯৬১৯৪৩৫৪ এবং ৮০১৬০২১১০৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে অভিযোগ উঠছে দক্ষিণেও। এমনিতেই জেলায় রোগী পরিবহণের অ্যাম্বুল্যান্সের পরিমাণ কম। গোটা জেলায় সাধারণ রোগী পরিবহণের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে ৪২টি। ১০২ নম্বরে ফোন করলে তাদের পাওয়া যায়। তার মধ্যে ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলায় আছে ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স। এ ছাড়া, প্রসূতি পরিবহণের জন্য আলাদা অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন রোগীর পরিবারের লোকজন। রাত-বিরেতে অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করলেই প্রথমে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কী রোগের রোগী নিয়ে যেতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি শুনলেই সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফোন বন্ধ থাকছে বলেও অভিযোগ। ফলে অন্য রোগের ক্ষেত্রেও অ্যাম্বুল্যান্স মিলছে না।

প্রতিটি হাসপাতালে সরকারি অনুমোদিত ‘১০২ শ্রেণির’ একটি বা একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে করোনা রোগী পরিবহণের জন্য স্বাস্থ্য দফতর অনেক অ্যাম্বুল্যান্সই তুলে নিয়েছে। মন্দিরবাজার নাইয়ারাট গ্রামীণ হাসপাতালে একটি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। তা তুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি ৩টি নিশ্চয়যান রয়েছে বটে, কিন্ত তারা জ্বর, সর্দি, কাশি বা পেটে ব্যথার রোগী বইতে রাজি হচ্ছে না।

ওই হাসপাতালের বিএমওএইচ দেবব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘নিশ্চয়য়ান ভয়ে যদি রোগী না আনতে যায়, আমাকেই দায় নিতে হবে। তাই একটা অটো মজুত করে রেখেছি। কোনও রোগীর পরিবার যদি অ্যাম্বুল্যন্স চেয়ে না পান, সেখানে অটো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’

অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, মেনে নিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় জানান, স্বাস্থ্য জেলায় আরও ১০টি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy