ভোগান্তি: ন্যাজাট ডাকঘরের সামনে। নিজস্ব চিত্র
আধার কার্ডে বাবার নাম রয়েছে। কিন্তু হবে স্বামীর নাম। সংশোধনের জন্য রাত ২টো থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন সন্দেশখালি ২ ব্লকের বেড়মজুর গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা বিবি। কোলে বাচ্চা নিয়েই ন্যাজাটের ডাকঘরে তাঁকে দিন পাঁচেক ধরে লাইন দিতে হচ্ছে। অভিযোগ, কোনও কাজই এগোচ্ছে না তাঁর।
শুধু আয়েশা নন। আধার কার্ড সংশোধন এবং নতুন আধার কার্ড তৈরি করতে অনেকেই আসছেন ডাকঘরের কর্মীদের কাছে। কারও কাজই হচ্ছে না বলে দাবি মানুষের।
নয়া নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কে এখন আধার কার্ডের ভুল শোধরাচ্ছেন অনেকেই। তাই নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে রাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আধার কার্ড ঠিক করাবেন বলে আসছেন তাঁরা। কিন্তু সকালে ডাকঘর খোলার পর কিছুক্ষণ ওই কাজ করেই নানা সেখানকার কর্মীরা তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ। রাত ভোর লাইনে দাঁড়ানোর পর অনেককেই শুনতে হচ্ছে অগস্ট মাসে এসে নাম লিখিয়ে যেতে হবে। এরপর বিষয়টি দেখা হবে।
সন্দেশখালিতে একাই দুই শিশু নিয়ে থাকেন আয়েশা। কর্মসূত্রে তাঁর স্বামী বাইরে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘আধার কার্ড সংশোধনের জন্য আমাকে পাঁচদিন পর বলা হয়েছে আগস্ট মাসে এসে নাম লিখিয়ে যাবেন। আমি রোজ এসেছি। রাত ২টো উঠে বাচ্চাদের নিয়ে এসে ডাকঘরের সামনে লাইন দিয়েছি। তা হলে আগে কেন বলা হল না।’’ তিনি জানান, ডাকঘরের বাইরে কয়েকজন তাঁর কাছে এই কাজ করার জন্য ৫০০ ও ২০০০ টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে লাইন ছাড়াই কাজ হয়ে যাবে বলে কিছু লোক আশ্বাস দিচ্ছেন। এই অভিযোগ অবশ্য অনেকেরই।
কেন হচ্ছে না কাজ?
পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়ানো এক যুবক বলেন, ‘‘প্রথম কুড়ি জনের আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে। বাকিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কাজ মিটছে না। দেরি হচ্ছে। লাইনে বহু মানুষকে দাঁড়াতে হচ্ছে।’’ সোমবার ডাকঘরের লাইনে দাঁড়ানো খোদাবক্স বৈদ্য নামে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বাসিন্দা বলেন, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভয়ে আছি। তাই আধার কার্ডে আমার নামের বানান ঠিক করতে এখানে তিনবার এলাম। এমনকী যাতে প্রথম ২০ এর মধ্যে দাঁড়াতে পারি তাই তিন দিনই রাত ৩টে থেকে এখানে লাইনে দাঁড়াতে আসছি। আজকে পেরেছিলাম প্রথম ২০ জনের মধ্যে থাকতে। কিন্তু প্রথমে বাচ্চাদের আধার কার্ড করার কাজ চলছিল ফলে আমারটা আজও হল না।’’
সন্দেশখালির দু’টি ব্লক এবং হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ন্যাজাটের এই ডাকঘরে নতুন আধার কার্ড ও আধার কার্ড সংশোধনের জন্য মানুষ ভিড় করছেন। তাঁরা জানান, যেহেতু হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির আর কোনও ডাকঘরে এই কাজ চলছে না, তাই বহু দূর থেকে এখানে আসছেন সবাই। যেমন হাসনাবাদের কালুতলা বাসিন্দা শঙ্কর দাস, হাসনাবাদের পারঘাটার বাসিন্দা ললিতা মণ্ডলরা এ দিন বলেন, ‘‘দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। বার বার এত দূর থেকে এই ডাকঘরে বাচ্চা নিয়ে আসতে যেতেই তো কয়েক’শো টাকা খরচ হয়ে গেল। জানি না কাজ মিটবে কবে।’’
অন্য দিকে হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল, সাহেব বৈদ্যরা বলেন, ‘‘১২ দিন হয়ে গিয়েছে এখানে আসছি। আমাদের আধার কার্ডে নামের ভুল সংশোধন করতে। এই কাজ না হলে বাচ্চাদের আধার কার্ড করতে পারছি না।’’
যেখানে এত মানুষ ডাকঘরে আসছেন, সেখানে মাত্র কুড়িজনের আবেদন পত্র নেওয়া হচ্ছে কেন?
ডাকঘর সূত্রের খবর, কর্মী কম। প্রত্যেকদিনের কাজ সামলিয়ে আধার কার্ডের কাজ করতে হচ্ছে। তাই
দেরি হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy