প্রতীকী ছবি।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন বনগাঁর এক তরুণী। স্বামী তাঁকে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসক দেখে জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, মাইক্রোসার্জারি করলে হাজার কুড়ি টাকা খরচ। পরিবারটি জানায়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। তাঁদের অভিযোগ, তারপরেও অস্ত্রোপচার বাবদ কয়েক হাজার টাকা নগদে দিতে হয়েছে।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও কেন বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে রোগীকে? এ বিষয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে মাইক্রোসার্জারি করতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সরকার দেয় ১২,৯০০ টাকা। কিন্তু খরচ হয় ১৯-২০ হাজার টাকা। তাই বাকি টাকাটা রোগীর পরিবারের কাছ থেকে নগদে নেওয়া হয়।
দিন কয়েক আগে রামপ্রসাদ সাহা নামে এক চায়ের দোকানি স্ত্রী মাম্পিকে নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিলেন। মাম্পি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে। খরচ, ২৬ হাজার টাকা।
রামপ্রসাদ জানান, স্ত্রীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সিজার করা হয় না। অগত্যা রামপ্রসাদকে ২৬ হাজার টাকা গুণতে হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘তা হলে কার্ড থেকে কী লাভ হল!’’
বনগাঁ শহরের কয়েকজন নার্সিংহোম মালিক জানালেন, এখানে মূলত অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলব্লাডার স্টোন, সিজার, মলদ্বারের অস্ত্রোপচার বা হাত-পা ভাঙার মতো ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয়। জেনারেল মেডিসিন-সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এক নার্সিংহোম মালিক জানালেন, মেডিসিন ওয়ার্ড খুলতে যে পরিকাঠামো দরকার, সেই খরচ করেও যথেষ্ট রোগী আসে না। তা ছাড়া, ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না। সে কারণে এখানে নার্সিংহোমগুলিতে মেডিসিন ওয়ার্ড চালুই করা হয়নি।
একাধিক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানালেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সিজার, মলদ্বারে অস্ত্রোপচার হয় না। তবে নাক-কান-গলার চিকিৎসা হচ্ছে না। অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলব্লাডার স্টোন ও অর্থোপেডিক্সের মতো বিষয়ে চিকিৎসা হয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে।
এক নার্সিংহোম মালিকের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সরকার যে টাকা দেয়, তাতে বড় অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছেন, তাঁরাও সে কথা জানেন। সে কারণে আমরা রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা চেয়ে নিই। বুঝিয়ে বলা হয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যে টাকা দেওয়া হয়, তাতে বড় অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। রোগীর পরিবারও সহযোগিতা করেন। আমাদের সমস্যার কথা বোঝেন। এ ভাবেই চলছে।’’
তবে অনেক রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা বাড়তি টাকা দিতে চান না বলেই জানা গেল। যা নিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা বাধে। অনেকের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড গরিব মানুষের কথা ভেবে করা হয়েছে। তারপরেও কেন আমরা টাকা দেব? সরকারের উচিত বিষয়টিতে নজর দেওয়া।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কোনও অভিযোগ পেলে তারা পদক্ষেপ করে।
বনগাঁ শহরের একটি নার্সিংহোমের মালিক স্বপন চক্রবর্তী অবশ্য দাবি, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে কার্যত রোগীর কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয় না। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে সামান্য টাকা নিতে হয়।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করালে নিয়মিত টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বা দেরি হচ্ছে বলে জানালেন অনেক নার্সিংহোম মালিকই। স্বপনের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মাসে ১০ হাজার টাকার পরিষেবা দিলে আমরা পাচ্ছি ২৫০০-৩০০০ টাকা।’’
বনগাঁ শহরের আর একটি নার্সিংহোমের মালিক চিকিৎসক আশিসকান্তি হীরা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে পরিষেবা দেওয়া খুবই কঠিন। তবে আমরা কোনও রোগীকে ফেরাই না। গরিব মানুষের কথা ভেবে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি।’’
আরও এক নার্সিংহোমের মালিক মলয় সাহা বলেন, ‘‘একমাত্র অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যা টাকা পাওয়া পাওয়া যায়, তাতে হয়ে যায়। আমরাও রোগীকে ফেরাই না।’’
নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অর্থোপেডিক্স ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে টাকা বাড়ানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে টাকা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে টাকা মেলে, তার ১০ শতাংশ আবার কেটে নেওয়া হয়। টাকা না বাড়ালে ভবিষ্যতে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy