Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বিষ ছড়াচ্ছে পার্থেনিয়াম

পাতা অনেকটা গাজর গাছের মতো। স্থানীয় মানুষ একে ‘গাজর গাছ’ও বলেন। গাছগুলি ৩-৪ হাত লম্বা। ছোট ছোট সাদা রঙের ফুল ধরে তাতে।

বিষাক্ত: রাস্তার পাশে পার্থেনিয়াম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বিষাক্ত: রাস্তার পাশে পার্থেনিয়াম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০১:১০
Share: Save:

রাস্তার দু’পাশে সবুজ ঝোপ। আপাত ভাবে নয়নাভিরাম দৃশ্য। কিন্তু এই শোভা বাড়িয়েছে পার্থেনিয়াম। বিষাক্ত এই গাছ থেকে নানা রোগ হতে পারে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বিশেষ কোনও ধারণাই নেই সে সম্বন্ধে।

পাতা অনেকটা গাজর গাছের মতো। স্থানীয় মানুষ একে ‘গাজর গাছ’ও বলেন। গাছগুলি ৩-৪ হাত লম্বা। ছোট ছোট সাদা রঙের ফুল ধরে তাতে।

গোপালনগর থানার বেলেডাঙা এলাকার গোপালনগর-বাজিতপুর রাস্তা ধরে সাইকেল চালাচ্ছিলেন এক চাষি। জানালেন, ‘‘শুনেছি গাছগুলি ক্ষতিকারক। এলাকার মানুষ তো মাঝেমধ্যে ওই গাছ কেটে বাড়িও নিয়ে যান। শুনেছি, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।’’ বেশির ভাগ মানুষের তেমন কোনও সচেতনতা নেই এই গাছ নিয়ে। কেউ কেউ শুধু জানেন, গাছগুলি ক্ষতিকর। তবে কী ধরনের ক্ষতি, তা নিয়ে বেশির ভাগেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। প্রশাসনের তরফেও প্রচার হয় না। স্থানীয় যুবকেরা মাঝেমধ্যে পার্থেনিয়ামের ঝোপ কেটে পরিষ্কার করেন। তাঁরা জানালেন, স্কুল পড়ুয়ারা অনেক সময়ে বাড়ি ফেরার পথে ওই গাছ থেকে ফুল তুলে নিয়ে যায়। না জেনেই এটা করে। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাঝে মধ্যে ঝোপ পরিষ্কার করা হয়।

বনগাঁ মহকুমার প্রধান সড়কগুলি ছাড়াও ওই অঞ্চলের যে কোনও গ্রামের রাস্তায় গেলেই চোখে পড়বে পার্থেনিয়ামের ঝোপ। গোপালনগর-বাজিতপুর সড়ক ছাড়াও গোপালনগর-নহাটা, হেলেঞ্চা-সিন্দ্রাণী, হেলেঞ্চা-বয়রা, গাইঘাটা-গোবরডাঙা সড়কে এবং ঝাউডাঙা রোড ও রামনগর রোডে যথেচ্ছ ভাবে গজিয়ে উঠেছে পার্থেনিয়াম। কোথাও কোথাও প্রায় ১ কিলোমিটার পথ জুড়ে এই ঝোপ দেখা যায়।

স্থানীয় ক্রীড়া প্রশিক্ষক গৌর রায় বাগদার সিন্দ্রাণী এলাকায় তাঁর ছাত্রদের নিয়ে মাঝে-মধ্যে ঝোপ-জঙ্গল সাফাই অভিযানে নামেন। গত বছরে তিনি সিন্দ্রাণী-দত্তফুলিয়া সড়কে পার্থেনিয়াম সাফাই করেছিলেন। গৌর বলেন, ‘‘গত বছরে আমাদের এখানে অনেকেরই চর্মরোগ হয়েছিল। তাঁরা জানেন না, কী কারণে তাঁদের এটা হয়েছিল। আসলে পার্থেনিয়াম নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনও সচেতনতাই নেই। এ বারও পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযান শুরু করব। প্রশাসনের সঙ্গে কথাও বলেছি।’’

তিনি জানান, পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযানে কিছু সর্তকতা নেওয়া জরুরি। দস্তানা ও মুখোশ ব্যবহার বাধ্যতামূলক। অনেক সময়েই দেখা বিভিন্ন সংগঠনের তরফে পার্থেনিয়াম সাফ করা হচ্ছে এই ধরনের কোনও সর্তকতা ছাড়াই। বনগাঁ শহরে দেখা যায় লোকজন পার্থেনিয়াম কেটে সেখানেই ফেলে রেখেছেন।

গত বছর গোপালনগরের পাল্লা কালীপদ চক্রবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্প শাখার তরফে স্থানীয় শ্রীমন্তপুর গ্রামে শিবির করে মানুষকে পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বোঝানো হয়েছিল। সেই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বাস্তবে তাঁরা পার্থেনিয়াম নিয়ে বিন্দুমাত্র সচেতন হননি।

এ নিয়ে চিকিৎসকেরা কী বলেন?

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘পার্থেনিয়াম মানুষের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। এর ফুলের রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছতে পারে। যা থেকে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি হতে পারে।’’ শুধু মানুষ নয়, এর ফলে গবাদি পশু ও ফসলেরও ক্ষতি হয়। গরু-ছাগল এই গাছ খেয়ে ফেললে জ্বর ও বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। কৃষিজমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদ‌ন কমিয়ে দেয়। পুড়িয়ে ফেললেও রেণু উড়ে অন্যত্র বিস্তার লাভ করতে পারে।

পরিবেশকর্মীরা এই প্রসঙ্গে জানান, সব থেকে ভাল হয়, গাছ কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে। পার্থেনিয়াম এলাকার মধ্যে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করলে গাড়ি ভাল করে ধুয়ে ফেলা উচিত বলে জানান তাঁরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, গাড়ির চাকার কাদামাটিতে জড়িয়ে পার্থেনিয়ামের বীজ বাড়িতেও পৌঁছে যেতে পারে। একই ভাবে জুতোর তলায় জড়িয়েও বীজ ছড়িয়ে পড়তে পারে। জুতোও ভাল করে ধুয়ে ফেলা উচিত।

মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পার্থেনিয়াম কাটার কাজ করছে। প্রশাসনের তরফেও অভিযান চালানো হবে। পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেও পদক্ষেপ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Parthenium Tree Poison Bongaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy