Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Parthenium

আপন মনে বেড়ে চলেছে পার্থেনিয়াম, ছড়াচ্ছে দূষণ

বিশেষজ্ঞেরা বারবারই বলছেন, পার্থেনিয়াম থেকে বড় ক্ষতি হতে পারে।

গরু খাচ্ছে পার্থেনিয়াম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

গরু খাচ্ছে পার্থেনিয়াম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৬
Share: Save:

পার্থেনিয়ামে ভরে গিয়েছে রাস্তার দু’ধার। বনগাঁ মহকুমা জুড়ে বিভিন্ন এলাকাতেই চোখে পড়ছে এই ছবি। লকডাউনের সময় থেকে প্রশাসন বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পার্থেনিয়াম সাফাই বন্ধ রয়েছে। ফলে রাস্তার দু’পাশে বেড়েই চলেছে ক্ষতিকর এই গাছ। গাছগুলিতে ছোট ছোট সাদা রঙের ফুল ফুটে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞেরা বারবারই বলছেন, পার্থেনিয়াম থেকে বড় ক্ষতি হতে পারে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘পার্থেনিয়ামের ফুলের রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তা ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি হয়ে থাকে।’’ গাছের পাতাগুলি গাজর পাতার মতো দেখতে বলে অনেকে একে ‘গাজর গাছ’ বলেন। যেখানে সেখানে গজিয়ে ওঠে এই গাছ। মানুষ গবাদি পশু ও ফসলের ক্ষতি হয়। গরু, ছাগল গাছ খেয়ে ফেললে তাদের জ্বর ও বদহজম হয়। চাষেরা জমিতে হলে ফসলের উৎপাদ‌নও কমিয়ে দেয়।

কিন্তু ক্ষতিকর এই গাছ নিয়ে সচেতনতা নেই অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই। উদাসীন প্রশাসনও। সম্প্রতি গোপালনগর-বাজিতপুর রোডে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার পাশে পার্থেনিয়াম ঝোপের মধ্যে বাঁধা রয়েছে গরু। গরুর মালিক পাশে দাঁড়িয়ে। গরু আপন মনে ঘাস ও পার্থেনিয়াম খাচ্ছে। পার্থেনিয়াম নিয়ে ধারণাই নেই গরুর মালিকের। তাঁর কথায়, ‘‘জানি না ওইগুলো কী গাছ।’’ বনগাঁ-পাটশিমুলিয়া সড়কের পাশে দেখা গেল পার্থেনিয়াম ঝোপের পাশে দাঁড়িয়ে গল্পে মশগুল চার যুবক। কথা বলে জানা গেল, গাছগুলো যে ক্ষতিকারক, তা তাঁরা জানেন। তবু ভ্রূক্ষেপ নেই। এলাকার মানুষ জানালেন, মাঝে মধ্যেই ওই গাছ কেটে বাড়ি নিয়ে যান। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারও করা হয়।

পঞ্চায়েতের পাশাপাশি স্থানীয় যুবক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা রাস্তার ধারে এই পার্থেনিয়ামের ঝোপ কেটে পরিষ্কার করেন। তবে লকডাউনের সময়ে ওই কাজ কমেছে। ফলে পার্থেনিয়াম বাড়ছে।

সম্প্রতি গোপালনগরের রঘুনাথপুরে পার্থেনিয়ামের ঝোপ কেটে পরিষ্কার করেছেন কলেজ শিক্ষক অধীর রায়-সহ স্কুল শিক্ষক, পুলিশ কর্মী ও রেলকর্মীরা। অধীরবাবু বলেন, ‘‘পার্থেনিয়াম কেটে পরিষ্কার করেছি। বাসিন্দাদের এ বিষয়ে সচেতন করেছি। আবার আমরা পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযান করব।’’ কয়েক দিন আগে বনগাঁর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে জোড়াব্রিজ ও প্রতাপনগর এলাকায় নুন জল স্প্রে করে পার্থেনিয়াম নষ্ট করা হয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি প্রজা ঢালি বলেন, ‘‘প্রতি মাসে কয়েকদিন আমরা পার্থেনিয়াম সাফাইয়ের কাজ করব।’’ বাগদার সিন্দ্রাণী এলাকায় ক্রীড়া প্রশিক্ষণ গৌর রায় ছাত্রদের নিয়ে অতীতে পার্থেনিয়াম সাফাই করেছেন। গৌর বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য পার্থেনিয়াম সাফাই কাজ করা সম্ভব হয়নি। শীঘ্র পার্থেনিয়াম সাফাই করব।’’ অনেক চাষি পাট পচানোর জন্য রাস্তার পাশে পার্থেনিয়াম কেটে সাফ করেন। যদিও নিরাপত্তা ছাড়াই তাঁরা এই কাজ করছেন।

পার্থেনিয়াম পুড়িয়ে ফেললেও রেণু উড়ে গিয়ে অন্যত্র বিস্তার লাভ করতে পারে। পরিবেশ কর্মীরা জানান, সব থেকে ভাল হয়, মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দিলে। পার্থেনিয়াম এলাকার মধ্যে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করলে বাড়ি এসে গাড়ি ভাল করে ধুয়ে ফেলা উচিত। কারণ, গাড়ির চাকার কাদামাটিতে জড়িয়ে পার্থেনিয়ামের বীজ বাড়িতে পৌঁছে যেতে পারে। জুতো তলার ময়লাতে জড়িয়েও বীজ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ভাল করে জুতোও ধুয়ে ফেলা উচিত।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে পার্থেনিয়াম সাফাইয়ের কাজ হয়েছে। কিন্তু ওই প্রকল্পে এখন পার্থেনিয়াম কাটার সুযোগ নেই। বনগাঁর বিডিও সঞ্জয়কুমার গুছাইত বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতগুলিকে বলে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে, ক্লাব সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে পার্থেনিয়াম সাফাইয়ের কাজ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Parthenium Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy