Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja

মণ্ডপের বাইরে ভিড় জমবে, ধরেই নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা

সচেতন নাগরিকেরা এই পরিস্থিতিতে বিপদ আঁচ করছেন। তাঁদের মতে, এখন দু’টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করছে জনস্বাস্থ্য।

মাপজোক: ব্যারিকেড তৈরির তোড়জোড়। ছবি: দিলীপ নস্কর

মাপজোক: ব্যারিকেড তৈরির তোড়জোড়। ছবি: দিলীপ নস্কর

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

সকলে জানাচ্ছেন, আদালতের রায় মানতে তাঁরা বাধ্য। কেউ পাঁচ, কেউ দশ মিটার দূরে গণ্ডি বেঁধে আটকে দেবেন দর্শক। কিন্তু পথে যাঁরা নামবেন, তাঁদের আটকানোর দায় নেই পুজো কমিটির— সাফ জানাচ্ছেন প্রায় সকলেই। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অনেক পুজো কমিটিকে গণ্ডিবাঁধার থেকে মণ্ডপ সাজানোতেই বেশি নজর দিতে দেখা গেল। অনেকে আবার যুক্তি দিচ্ছেন, ১০ মিটারের দূরত্ববিধি মানতে হলে ব্যারিকেড চলে যাবে রাস্তায়। সে ক্ষেত্রে রাস্তা আটকাতে হবে। ব্যারিকেডের মাপ কোন যুক্তিতে বদলে ফেলা যায়, সেই আইনের ফাঁক খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছেন তাঁরা। প্রতিমা থেকে ১০ মিটার দূরত্ব মেপে মণ্ডপের মাঝামাঝিও ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড ঝোলাচ্ছেন কেউ কেউ।

সচেতন নাগরিকেরা এই পরিস্থিতিতে বিপদ আঁচ করছেন। তাঁদের মতে, এখন দু’টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করছে জনস্বাস্থ্য। প্রথমত, পথের ভিড়কে কী ভাবে এবং কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে পুলিশ-প্রশাসন। দ্বিতীয়ত, আদালতের রায়ের মূল নির্যাসটুকু উৎসবপ্রিয় বাঙালি কতটা বুঝে উঠতে পারল, সেটাও খুব জরুরি। অর্থাৎ, স্বেচ্ছায় এ ক’টা দিন মানুষ ঘরবন্দি থাকবেন কিনা, তার উপরেও নির্ভর করবে পথেঘাটের ভিড়-চিত্র।

প্রশাসনের নির্দেশ মতো আগে থেকেই তিন দিক খোলা মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বসিরহাটের বিভিন্ন জায়গায়। ফলে অধিকাংশ প্রতিমা মণ্ডপের বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে। পুজো উদ্যোক্তারা অনেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেখানে রাস্তার পাশে মণ্ডপ করা হয়েছে, সেখানে প্রতিমা থেকে ১০ গজ দূরে রিবন লাগিয়ে দেওয়া হবে। যাতে দর্শক প্রতিমার কাছাকাছি যেতে না পারেন। আবার তাঁরা যাতে রাস্তার উপরেও ভিড় না করেন, সে দিকটা লক্ষ্য রাখবে পুলিশ। তবে ক্লাবও এই কাজে পুলিশকে সাহায্য করবে বলে জানাচ্ছেন অনেকে। এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘আইনের ফাঁক গলে কী ভাবে সব দিক রক্ষা করা যায়, তার চেষ্টা চলছে।’’

মণ্ডপের ১০ মিটার দূরে বড় জায়েন্ট স্ক্রিন লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। কোথা থেকে কী ভাবে সে সব জোগাড় করা যায়, তা নিয়ে ছুটোছুটি শুরু হয়েছে। তাতে বাজেট বেশ খানিকটা বাড়বে বলেও অনেকে চিন্তিত।

ভাঙড়ের কাশীপুর শতধারা প্রমিলা সঙ্ঘের সম্পাদক রিনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মণ্ডপের বাইরে ৫ মিটার দূরে ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে। ভিড় যাতে না হয়, তা দেখার জন্য আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা থাকবেন।’’ রাস্তার বাইরের ভিড় আটকাতে পুলিশও থাকবে বলে তাঁদের আশা। বসিরহাট বাজারপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক পিনাকী নাথও জানালেন, ভিড় যাতে না হয়, সে দিকে সদস্যেরা লক্ষ্য রাখবেন। বসিরহাটের স্মৃতি সঙ্ঘ পুজো কমিটির সম্পাদক ধ্রুব দাস জানান, নির্দিষ্ট দূরত্বে নো এন্ট্রি বোর্ড থাকবে। ভিড় আটকাতে থাকবেন ভলান্টিয়ারেরা। অর্থাৎ, ভিড় যে হচ্ছেই, তা মোটামুটি ধরেই নিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

জীবনতলার দেউলির এক পুজো কমিটির উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘পাড়ার পুজোতে অনেক মানুষ যুক্ত থাকেন। তাঁদের পরিবার-পরিজনেরাও থাকেন। সকলকে কী ভাবে আটকাবো? তাঁরা তো পুজো কমিটির সঙ্গেই যুক্ত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি অনুদানের টাকায় যেখানে আমাদের মণ্ডপ, প্রতিমা সব কিছু তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেখানে কী ভাবে হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দেওয়া হবে বুঝতে পারছি না।’’ কিন্তু অনুদানের টাকা তো প্রতিমা বা মণ্ডপ সজ্জায় খরচ করার কথা নয়। এ নিয়ে মোবাইলের ও প্রান্ত থেকে আর কথা বাড়াতে চাইলেন না ভদ্রলোক।

হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরে মিনাখাঁর মালঞ্চে তরুণ সঙ্ঘ মণ্ডপের একাংশ খুলে ফেলেছে। মণ্ডপের চারিদিকে ব্যারিকেড দেওয়া থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ক্লাবের নামে খোলা হয়েছে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। সেখানে পুজোর লাইভ টেলিকাস্ট চলবে।

ক্যানিংয়ের অন্যতম বড় পুজো উদ্যোক্তা মিঠাখালি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক পরেশরাম দাস বলেন, ‘‘উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেই চলব। কিন্তু মানুষের আবেগটাও তো বুঝতে হবে।’’ ক্যানিংয়ের আর এক বড় পুজো উদ্যোক্তা হাসপাতালপাড়া সর্বজনীনের সভাপতি অর্ণব রায় বলেন, ‘‘আমাদের মণ্ডপ কার্যত মূল রাস্তার পাশেই। সেখানে কী ভাবে দশ মিটার জায়গা ছাড়া সম্ভব?’’

১০ মিটারে ব্যারিকেড দেওয়ার তেমন উদ্যোগ মঙ্গলবার দুপুরেও চোখে পড়ল না বনগাঁয়। শহরের অন্যতম বড় পুজো প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল, মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। মাঠে খাবারের অস্থায়ী দোকানপাট বসেছে। এক দোকানি জানালেন, বুধবার থেকে দোকানগুলি চালু হয়ে যাবে।

হাবড়ার হিজলপুকুর মধ্যপাড়া সর্বজনীনের সম্পাদক রঞ্জু দাম জানালেন, চারটি জায়েন্ট স্ক্রিন লাগানো হচ্ছে। ক্লাবের সদস্যেরা সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করবেন। পুলিশও থাকবে। এক সঙ্গে পাঁচজনের বেশি দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।’’

গাইঘাটার একটি পুজো কমিটি আবার জানিয়েছে, মণ্ডপের পিছনে ছোট গেট থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য। সেখান দিয়ে ঢুকে ঠাকুর দিয়ে আবার ওই পথেই বেরিয়ে যাওয়া যাবে। ক্লাবের এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানো এত সহজ নাকি!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy