হিঙ্গলগঞ্জ বিডিও অফিসে মনোনয়ন পেশ চলছে বামেদের। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। প্রথম দিনই দুই জেলার একাধিক ব্লকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিরোধী প্রার্থীরা। শাসক তৃণমূলের তরফেও কোথাও কোথাও মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অভিযোগও উঠেছে একাধিক। বেশি কিছু ব্লকে প্রশাসনের প্রস্তুতির অভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে শাসক দলের বাধা, মারধরের অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা।
ক্যানিং ১ ব্লকে এ দিন বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। এমনকী, মনোনয়ন জমা দিতে গেলে কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বিজেপির দাবি, তাদের ক্যানিং ১ মণ্ডল সভাপতি মনোজ সরকার-সহ তিন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। আইএসএফের অভিযোগ, ক্যানিং ১ ব্লকের অবজার্ভার মেঘনাদ হালদারকে মারধর করা হয়। সিপিএমের বেশ কয়েক জন কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিজেপি ও আইএসএফ ইতিমধ্যেই ক্যানিং থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধেই উঠছে অভিযোগ আঙুল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল নেতা উত্তম দাস বলেন, “বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা চাই, সমস্ত রাজনৈতিক দল ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক।”
কাকদ্বীপের বিভিন্ন ব্লকে এ দিন বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। সিপিএমের অভিযোগ, প্রশাসনের প্রস্তুতির অভাবেই মনোনয়ন দেওয়া যায়নি। সাগরের সিপিএম এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিধান দাস বলেন, “আমরা প্রথম দিন ২০০ নমিনেশন পেপার আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিডিও অফিস থেকে তা দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে, প্রত্যেক প্রার্থীকে এসে ডিসিআর কেটে, ফর্ম ফিলআপ করে জমা দিতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তেমন কোনও প্রস্তুতিই নেই মনোনয়ন জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে। আমরা দলের পক্ষ থেকে বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ছ’দিনে চার ঘণ্টা করে সময় দিয়েছে। তার উপরে যদি একটা দিন এই ভাবে চলে যায়, তা হলে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারবে না। এটাই চায় রাজ্য সরকার।” কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, মহকুমা অফিস এবং চারটি ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা নেওয়ার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত ছিল। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল প্রথম দিন মনোনয়ন জমা করেনি।
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলেন, “বেলা ১২টাতেও বেশিরভাগ ব্লকে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র পৌঁছয়নি। নির্বাচন কমিশন ও জেলাশাসককে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সব ইচ্ছুক প্রার্থী শান্তিপূর্ণ ভাবে যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, নির্বাচন কমিশনকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ১ ব্লকেও এ দিন প্রশাসনের ব্যর্থতায় মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি বলে দাবি বামেদের। অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে কাগজপত্র তৈরি ছিল না। সিপিএম সূত্রের খবর, এ দিন জেলা পরিষদের পদে মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র তুলতে বারাসত ১ ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন দলীয় প্রার্থীরা। কিন্তু ব্লক অফিস থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসেনি। অপেক্ষা করতে হবে। প্রশাসন প্রস্তুত না হয়ে নির্বাচনের দিন কেন ঘোষণা করল, সেই প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। দলের নেতা হাবিব আলি বলেন, “সকাল ১১টা থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসন প্রস্তুত ছিল না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিডিও মারফত লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।” বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, “কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাঁরা আবেদনপত্র তোলেন।” সন্দেশখালি ১ ব্লকে মনোনয়ন পেশ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মজদুর ক্রান্তি পরিষদের নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শেয়ারা রাধানগর পঞ্চায়েতের ৭ প্রার্থীকে নিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ গিয়েছিলাম। বিডিও অফিসের গেট আটকে কিছু লোক দাঁড়িয়েছিল। মনোনয়ন পেশ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপরে চলে আসতে বাধ্য হই। সোমবার ফের যাব মনোনয়ন পেশ করতে।” সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।” মিনাখাঁর বাম নেতা প্রদ্যোৎ রায় বলেন, “বিডিও অফিসে কয়েক জনকে নিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে গিয়েছিলাম বেলা ১১টা নাগাদ। আবেদনপত্র নেই বলে জানানো হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy