নদীর চর থেকে কাটা হচ্ছে বালি। নিজস্ব চিত্র
দু’দফায় সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা এখনও থাকেন লজ্ঝরে ছোট্ট বাড়িটাতেই। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই বিরোধীরা তোলে বহু দুর্নীতির অভিযোগ। চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা থেকে শুরু করে আমপানে ক্ষতিপূরণ দুর্নীতি— সবেতেই নাম জড়িয়েছে মন্টু বা তাঁর ঘনিষ্ঠদের। তবে কাকদ্বীপের ভূমিপুত্র মন্টু বলেন, ‘‘দুর্নীতি কেউ প্রমাণ করতে পারলে ক্ষমা চেয়ে নেব।’’
ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত মন্টুরাম। শুরুতে কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১১ সালে থেকে পর পর দু’বার দলের টিকিটে জিতেছেন।
কিন্তু এলাকার উন্নয়ন তাতে কতটা হয়েছে, সে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। নিকাশি নালার নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। বর্ষায় জমা জলে ভুগতে হয় বাসিন্দাদের। কাকদ্বীপ এলাকার যে সমস্ত নদীবাঁধ রয়েছে, তা আজও কংক্রিটের হল না। ফি বছর বর্ষায় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
শাসক দলের নেতারা ম্যানগ্রোভ কেটে মাছের ভেড়ি তৈরি করছেন বলে অভিযোগ আছে। পঞ্চায়েতের কাজে কাটমানির অভিযোগও আছে।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রচুর। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়ার প্রবণতা যার মধ্যে অন্যতম।
বুলবুল, আমপানে ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে নানা অভিযোগে বহু ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছিল বিভিন্ন পঞ্চায়েতে। বহু দরিদ্র পরিবার ক্ষতিপূরণ না পেলেও পাকা বাড়ির মালিক টাকা পেয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের সকলেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ, এই দাবি বিরোধীদের। একই পরিবারের একাধিক সদস্য ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে সে সময়ে সরব হয় বিজেপি-সিপিএম। বিদায়ী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আরও অভিযোগ, নদীর চর কাটা সাদা বালি বিক্রির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের এনে তাদের ভোটার কার্ড হয়ে যাচ্ছে। কাকদ্বীপ বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গোপালকৃষ্ণ দাসের অভিযোগ, ‘‘মন্ত্রীর আত্মীয় পরিজনেরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে সমস্ত রকম প্রকল্পের টাকা লোপাট করা হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়নের নামে অনুমোদনের কোটি কোটি টাকা কাটমানি খাওয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকা তোলা হয়েছে। কাকদ্বীপ হাসপাতালে অস্থায়ী কর্মী পদে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে।’’ কাকদ্বীপের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মিতেন্দু ভুঁইয়ার মতে, বহু বছর ধরে কাকদ্বীপে পুরসভা গঠনের প্রস্তুতি নিলেও মন্ত্রী সেই কাজ করতে পারেননি। খেলার মাঠে প্রায় সারা বছর ধরে শাসক দলের নানা অনুষ্ঠান চলে। খেলাধুলো প্রায় বন্ধ এলাকায়। তিনি বলেন, ‘‘কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্টে মুড়িগঙ্গা নদীর চর কাটা বালি বিক্রির টাকা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। কাকদ্বীপে পঞ্চায়েতের কোনও এমন প্রকল্প নেই, যা নিয়ে দুর্নীতি হয়নি। শাসক দলের সন্ত্রাসে বিরোধীদের ঘর ছাড়া থাকতে হচ্ছে।’’
মন্টুরাম বিরোধীদের অভিযোগকে আমল দেন না। বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে কাকদ্বীপ বিধানসভা এলাকার অলিগলিতে উন্নয়ন হয়েছে। কাকদ্বীপে দমকল কেন্দ্র, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতালের উন্নয়ন হয়েছে, নার্সিং প্রশিক্ষণ কলেজ, নতুন আদালত ভবন, বিচারকদের থাকার আবাসন তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় একাধিক সেতু হয়েছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাট প্রায় ১০০ শতাংশ শেষ হওয়ার মুখে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইনের সাহায্যে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে।’’ দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্টুর বক্তব্য, ‘‘সাদা বালি বিক্রির অভিযোগ ঠিক নয়। সরকারি নিচু জমি ভরাট করার জন্য তা ব্যবহার হয়। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে বালি নিলে তাদের থেকে টাকা নেওয়া হয় না।’’ পুরসভা না হওয়া প্রসঙ্গে মন্টুরাম বলেন, ‘‘পুরসভা তৈরির জন্য সমস্ত রকম সার্ভে হয়ে গিয়েছে।’’ আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। দলের কিছু মানুষ টাকা নিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। যাঁরা আবেদন করেছিলেন, সকলেই টাকা পেয়েছেন।’’ নদী বাঁধ তৈরির বিষয়টি সরকার দেখছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy