আরাবুল ইসলামের ছেলে হাকিমুল।
প্রাণনাশের আশঙ্কা করে পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী চাইলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের ছেলে হাকিমুল। ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে কখনও কাশীপুর থানা, কখনও বারুইপুর পুলিশ সুপারের কাছে নিরাপত্তার জন্য দরবার করছেন হাকিমুল।
নিজের দাদা খুন হওয়ার পরে বীরভূমের রামপুরহাটের বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখও খুন হতে পারেন বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন পুলিশের কাছে। নিরাপত্তা পাননি বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। পরে নিজেও খুন হয়ে যান ২১ মার্চ রাতে। যার বদলা নিতে ভাদুর লোকজন ওই রাতেই ৯ জনকে পুড়িয়ে মারে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলের আর এক উপপ্রধান হাকিমুল এবার প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কিন্তু কাকে ভয় পাচ্ছেন?
হাকিমুল বলেন, ‘‘এর আগে জমি কমিটির হাতে আক্রান্ত হয়েছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। তা ছাড়া, বিভিন্ন রকম ভাবে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা চলছে। যে কারণে আমি নিরাপত্তারক্ষী চেয়েছি।’’
সরাসরি কারও নাম করছেন না হাকিমুল। তবে এই এলাকায় আরাবুল ইসলামের সঙ্গে দলেরই বিরুদ্ধ আকচাআকচি সুবিদিত। হাকিমুলের আশঙ্কার কারণ দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই কিছু নেতা-কর্মী।
সম্প্রতি ভাঙড় বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে রেজাউল করিমকে। এরপর থেকেই আরাবুলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রহিম মোল্লা, কর্মাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মহসিন গাজি-সহ অন্যান্য নেতারা সক্রিয় হয়েছেন। এলাকায় ইদানীং কিছু কোণঠাসা আরাবুল-হাকিমুলরা— দলের অন্দরেই কান পাতলে শোনা যাচ্ছে সেই গুঞ্জন।
পুলিশ সূত্রের খবর, হাকিমুলকে যে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ দাখিল করেননি। তা ছাড়া, আগে কখনও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে কোথাও লিখিত অভিযোগও করেননি। বারুইপুর পুলিশ জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘কেউ নিরাপত্তারক্ষীর জন্য আবেদন করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হয়। ডাইরেক্টরেট অফ সিকিউরিটি নিয়ম অনুসারে কিছু গাইডলাইন মেনে নিরাপত্তারক্ষীর বন্দোবস্ত করা হয়। কেউ নিরাপত্তারক্ষী চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া যায় না।’’
এক সময়ে আরাবুলের দাপটে এলাকায় বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত বলে শোনা যায়। সেই আরাবুল-পুত্রের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। ভাঙড়ের জমি কমিটির নেতা মির্জা হাসান বলেন, ‘‘একজন সাধারণ উপপ্রধানের এমন ঠাটবাট হয় কী করে! যে রকম বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে ঘোরেন, তা এই এলাকায় খুব কম লোকেরই আছে। নিজেদের লোককেই ভয় পাচ্ছেন উনি।’’
বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও মনে করছেন, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই ভয় হাকিমুলের। তাঁর কথায়, ‘‘টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ওদের যত গন্ডগোল। বিরোধীদের জন্য নয়, নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই ওই নেতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘আগে ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদের আর্থিক অবস্থা কী ছিল, আর এখন কী হয়েছে— তা তদন্ত করলেই বোঝা যাবে। এলাকায় তোলাবাজি থেকে শুরু টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ওদের মধ্যে গন্ডগোল। যে কারণে তৃণমূলের ছোট, বড়, মাঝারি— সব ধরনের নেতাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়ান।’’
এ বিষয়ে আরাবুলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। কখনওই নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন মনে হয়নি। যে যেমন কাজ করবে, সে তেমন ফল ভোগ করবে। মানুষের জন্য কাজ করলে কারও নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন হয় না।’’
আরাবুলের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা অনেক কথাই বলবে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকম চক্রান্ত হচ্ছে। এর আগে হাকিমুলের উপরে আক্রমণ হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তাঁর ক্ষতি করা হতে পারে। সে কারণেই ওঁর নিরাপত্তারক্ষী প্রয়োজন।’’ হাকিমুল বলেন, ‘‘আমার নিজস্ব পেট্রল পাম্প, নির্মাণের ব্যবসা রয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy