অবরোধ: শ্যামনগরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
ধর্মঘট মানেই সব বিলকুল বন্ধ। একটা সময়ে এমন ছবিই ছিল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই দৃশ্যে কিছুটা বদল এসেছিল। বুধবারের ধর্মঘটে কিন্তু ফের পুরনো ছবিই দেখল এই শিল্পাঞ্চল।
এ দিন প্রায় কোনও কারখানাতেই চাকা ঘোরেনি। শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, এনআরসি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের সমর্থন রয়েছে। সকালের দিকে শ্যামনগর এবং অন্যান্য স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। সকালের দিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য অবরুদ্ধ ছিল ঘোষপাড়া রোডও।
আনাজের বাজার খোলা থাকলেও কাঁকিনাড়া, ভাটপাড়া, শ্যামনগর, নৈহাটি এলাকায় অনেক দোকানই খোলেনি। ধর্মঘটের সমর্থনে বাম-কংগ্রেসের মিছিল যেমন বেরিয়েছিল, তেমনি বন্ধের বিরোধিতা করে মিছিল করে তৃণমূলও। কিন্তু এ দিন কোথাও দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধেনি।
কয়েক মাস আগের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি। এখানকার সাংসদ অর্জুন সিংহ দাবি করেছিলেন, এলাকার চটকলগুলির সিংহভাগ শ্রমিক তৃণমূলের সংগঠন ছেড়ে তাঁদের সংগঠনে ভিড়েছেন। সেখানে এনআরসি-র বিরোধিতায় ডাকা ধর্মঘটে কারখানার চাকা না ঘোরা দীর্ঘ দিন ঘটেনি।
চটকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে বামেদের ডাকা ধর্মঘটে অনেক শ্রমিক কাজে আসেননি। কিন্তু বহু শ্রমিক কাজে যোগ দেওয়ায় মিল বন্ধ হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কী এনআরসি নিয়ে বিজেপি সংগঠনের শ্রমিকেরা শিবির বদল করেছেন? বিজেপি নেতারা অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। শ্রমিকেরা বলছেন, তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে আগেও ধর্মঘট হয়েছে। কিন্তু এ বার অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে এনআরসি এবং সিএএ বাতিলের দাবি। তার ফলেই শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘট এমন সর্বাত্মক হয়েছে।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে এই মুহূর্তে ২৫টি চটকল রয়েছে। তার মধ্যে ভাটপাড়ার রিলায়্যান্স চটকল মঙ্গলবার বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ভাটপাড়াল মেঘনা জুটমিল সরাসরি অর্জুন সিংহের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই জুটমিল এ দিন চালু ছিল। কিন্তু বাকিগুলিতে এ দিন আর উৎপাদন হয়নি। এ দিন সকালের শিফ্টে তিন-চার শতাংশ শ্রমিক কাজে গিয়েছিলেন। এত অল্প শ্রমিক দিয়ে মিল চালানো সম্ভব নয় বলে এ দিনের মতো উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে কখনও বামেদের ডাকা ধর্মঘটে প্রভাব পড়েনি শ্যামনগরের এক্সাইড কারখানায়। এ দিন সেখানেও কর্মীদের উপস্থিতি যথেষ্ট কম বলেই কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে। আগরপাড়ার টেক্সম্যাকো এবং ইলেকট্রোস্টিল কারখানাতেও কর্মীদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম।
টিটাগড় কেলভিন জুটমিলের কর্মী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেক আগে এমন বন্ধ হত। আমি গত কয়েক দিন ছুটিতে ছিলাম। এ দিন কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখি, শ্রমিক নেই বললেই চলে। এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে কেন্দ্র সরকার যা করছে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে।’’
এ দিন সকালে শ্যামনগর স্টেশনে রেল রুখে দেয় ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। পরে ঘোষপাড়া রোডও অবরোধ করা হয়। সকালের দিকে ব্যারাকপুর-বারাসত এবং ব্যারাকপুর-কাঁচরাপাড়া রুটে কিছু বাস চললেও বেলা বাড়তেই রাস্তা থেকে উধাও হয় বাস। রেল এবং সড়ক অবরোধের ফলে রাস্তা বেরিয়ে নাকাল হতে হয় মানুষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy