কচুয়া হাই স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন অমিত। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে পড়াচ্ছেন পুলিশ আধিকারিক। ভাঙড় ২ ব্লকের কচুয়া হাই স্কুলে সপ্তাহে এক দিন করে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছেন ভাঙড় ডিভিশনের উত্তর কাশীপুর থানার ওসি অমিত চট্টোপাধ্যায়। স্কুল সূত্রের খবর, এখানে শিক্ষক তুলনায় কম। তবে সে কারণে নয়, পুলিশ আধিকারিক নিজেই উদ্যোগী হয়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছেন। ইংরেজিতে কথা বলা, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, কেরিয়ার নিয়ে পরামর্শের পাশাপাশি জীবন বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা, আত্মরক্ষার পাঠও দিচ্ছেন পড়ুয়াদের।
বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী তুলে ধরে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে, কী ভাবে তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, সাংবাদিক, উকিল, শিক্ষক হতে গেলে কী কী করণীয় তা যেমন শেখানো হচ্ছে, তেমনই কলকাতার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যাতে ভাষাগত সমস্যা না হয়, সে জন্য ইংরেজিতে কথা বলা, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান বিষয়েও পাঠ দান করছেন পুলিশ কর্তা। কোনও ছাত্রছাত্রী যদি সমস্যায় পড়ে, সে জন্য নিজের ফোন নম্বরও সকলকে দিচ্ছেন ওসি। পুলিশ সূত্রের খবর, কোনও ছাত্রছাত্রীর বই, খাতা কিনতে বা কোচিংয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সাহায্য লাগলে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
পুলিশ কর্তার ক্লাস ঘিরে উৎসাহ তৈরি হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এলাকার অন্যান্য স্কুলের পড়ুয়ারাও ‘অমিত স্যারের’ ক্লাস করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেল। পুলিশ সূত্রের খবর, নানা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের পরেও নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না, দ্বাদশ শ্রেণির পড়া শেষ করার পর অনেকেই দিশা হারিয়ে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে, অনেকেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। সেই জায়গা থেকে ছাত্রছাত্রীদের সঠিক দিশা দেখাতে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তর কাশীপুর থানার ওসি। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কচুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গোস্বামী। তিনি বলেন, “আমরা চাই সপ্তাহে এক দিন নয়, প্রতি দিন উনি অন্তত একটা করে ক্লাস নিন। গ্রামীণ এলাকায় এখনও অনেক অভিভাবক বাল্যবিবাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করেও এ ধরনের বিয়ে আটকাতে পারিনি। পুলিশ ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি, এ ধরনের বিষয়ে নিয়ে সচেতন করলে অভিভাবকেরা অনেকটাই সাবধান হয়ে যাবেন।” তিনি আরও বলেন, “এ ভাবে যদি পুলিশকর্তা আমাদের সঙ্গে মিলিত ভাবে ক্লাস নেন, তা হলে সমাজের কাছে একটা ভাল বার্তা পৌঁছবে।”
অমিত বলেন, “বাড়িতে আমার নিজের বাচ্চাকে পড়াই। এমনিতে পড়াতে আমার ভাল লাগে। যদি আমার ক্লাস নেওয়ায় স্কুলের বাচ্চাদের উপকার হয় এবং ভবিষ্যতে তারা যদি ভাল কিছু করতে পারে, তা হলে আমার এই উদ্যোগ সার্থক হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy