পরীক্ষা দিতে ঢোকার আগে শেষ বারের মতো বইতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে পরীক্ষার্থীরা - বনগাঁর এক পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই জেলাতেই এ বার মাধ্যমিকে ছাত্রদের তুলনায় অনেক বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৮,০৩৮ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ৪৪,৪২৮। অর্থাৎ, ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার বেশি। উত্তরে পরীক্ষার্থী ৫৪,১০৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৩০,৩০৬ জন। অর্থাৎ, ছাত্রদের তুলনায় হাজার ছ’য়েক বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে।
শিক্ষা দফতর ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মতে, রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, রূপশ্রী-সহ বিভিন্ন প্রকল্প ছাত্রীদের স্কুলমুখী করা গিয়েছে। বিশেষত, গ্রামীণ এলাকায় গরিব পরিবারে এই প্রকল্পগুলির প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া, শিক্ষামূলক নানা সচেতনতা শিবির থেকে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
ছাত্রের সংখ্যা কমে যাওয়ারও কারণ খুঁজেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মতে, বেশ কয়েক বছর ধরে নতুন কোনও কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। রাজ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ। ফলে উচ্চশিক্ষার প্রতি অনীহা দেখা দিয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। পড়াশোনা ছেড়ে অনেকেই কর্মমুখী বিভিন্ন কাজ শিখছে। অনেকেই আবার ভিন্ রাজ্যে গিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। তার প্রভাব পড়ছে ছাত্রদের শিক্ষায়।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেকে মনে করছেন, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি স্কুলছুট হয়েছিল। সাংসারিক অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে অনেকেই কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের আর স্কুলে ফেরানো যায়নি। তুলনায় মেয়েদের স্কুলছুট কম হয়েছে। কিছু নাবালিকার বিয়ে হলেও সংখ্যাটা ছেলেদের কাজে যুক্ত হওয়ার তুলনায় কম বলেই মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ।
স্কুলে স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি হওয়ায় নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা কমেছে বলে দাবি প্রশাসনের একাংশের। অভিভাবকেরাও কিছুটা সচেতন হয়েছেন। আঠারো বছর না হলে অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা বিয়ে দিচ্ছেন না। তত দিন মেয়েরা পড়াশোনা করছে।
মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, “গত দশ বছর ধরে চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে উচ্চশিক্ষার প্রতি বিশেষ জোর দিচ্ছে না ছাত্রেরা। তারা পরিবারের হাল ধরতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে চলে যাচ্ছে। অন্য দিকে, সরকারি প্রকল্পগুলি ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে সহায়ক হয়েছে। নাবালিকা বিয়ে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারলে আরও ছাত্রীর সংখ্যা বাড়বে।” তিনি আরও বলেন, “ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যার এই বৈষম্য সমাজের পক্ষে ভাল নয়। অবিলম্বে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, শিক্ষা দফতরের উচিত, বৈষম্যের কারণ অনুসন্ধান করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।”
অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক ব্রজেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “মেয়েরা শিক্ষার প্রতি আরও অনেক সচেতন হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প তাদের সাহায্য করছে। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি, ছেলেরা আগেভাগেই কাজে চলে যাওয়ায় সংখ্যায় কমছে।”
তথ্য সহায়তা: সীমান্ত মৈত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy