Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
নদিয়ার ঘটনা নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। ধর্ষিতা কিশোরীর দেহ কোনওরকম নজরদারি ছাড়া শ্মশানে নিয়ে গিয়ে কী ভাবে দেহ দাহ করে দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন উঠছে। শুধু নদিয়াতেই নয়, নজরদারিবিহীন এরকম শ্মশান ছড়িয়ে রয়েছে দুই ২৪ পরগনার নানা জায়গাতেই। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
Crematorium

Cremation: কার সৎকার হচ্ছে, দেখার নেই কেউ

পঞ্চায়েত প্রধান চঞ্চল মণ্ডলের দাবি, “এমনটা তো কখনও হয়নি। হওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, গ্রামাঞ্চলে কারও সন্দেহজনক মৃত্যু হলে জানাজানি হয়েই যায়।”

বেহাল: চারটি খুঁটি ছাড়া কিছুই নেই এই শ্মশানে।

বেহাল: চারটি খুঁটি ছাড়া কিছুই নেই এই শ্মশানে। নিজস্ব চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৭:১৩
Share: Save:

ধু ধু নদীর চরে বসানো চারটি লোহার খুঁটি।

এটাই গ্রামের একমাত্র শ্মশান। কেউ মারা গেলে গ্রামবাসীরা দেহ এনে ওই চারটি খুঁটিতে কাঠ সাজিয়ে দাহ করে চলে যান। হিঙ্গলগঞ্জের বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গৌড়েশ্বর নদীর চরে এই শ্মশানে কে, কখন, কার শব দাহ করতে আসছেন, তা দেখার কেউ নেই। শবদাহ নথিভুক্ত করা বা চিকিৎসকের শংসাপত্র খতিয়ে দেখার তো প্রশ্নই নেই!

বিশপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিত জানা জানান, কেউ মারা গেলে পরিবারের লোকজনই বন্দোবস্ত করে গৌড়েশ্বরের পাড়ে ওই শ্মশানঘাটে নিয়ে গিয়ে দাহ করে দেন। কোনও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠলে, তখন থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। তাঁর কথায়, “শ্মশানে নজরদারির ব্যবস্থা করতে পারলে তো ভাল। কিন্তু পঞ্চায়েতের হাতে কর্মী নিয়োগ করার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই। আশা করি, আগামী দিনে রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে।”

শুধু বিশপুরেই নয়, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় শ্মশানগুলিতে এ ভাবেই দাহকার্য চলে দিনের পর দিন। কোনও কোনও গ্রামে আবার এই ব্যবস্থাটুকুও নেই বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে কারও মৃত্যু হলে, নদীর চরে কোনও একটা জায়গা দেখে দাহ করে দেওয়া হয়। কোথাও আবার জমির প্রান্তে ফাঁকা জায়গা দেখেই কাঠ সাজিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় দেহ।
দুলদুলি পঞ্চায়েত এলাকাতেও কোনও শ্মশান নেই। গ্রামবাসীরা জানালেন, নদীর চরে ফাঁকা জায়গায় যার যেখানে সুবিধা হয়, সেখানেই দাহ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় তো কেউ কাউকে খুন করে প্রমাণ লোপাট করতে দেহ দাহ করে দিতে পারে? বাইরে থেকে দেহ নিয়ে এসেও তো নদীর চরে দাহ করে চলে যেতে পারে অপরাধীরা?

পঞ্চায়েত প্রধান চঞ্চল মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “এমনটা তো কখনও হয়নি। হওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, গ্রামাঞ্চলে কারও সন্দেহজনক মৃত্যু হলে জানাজানি হয়েই যায়। বাইরে থেকে কেউ এলেও পুলিশ ঠিক খবর পেয়ে যাবে।”

গোবিন্দকাটি পঞ্চায়েত এলাকায় একটি শ্মশানঘাট আছে। যদিও গ্রামবাসীরা তাঁদের সুবিধা মতো নদীর চরে বা নিজেদের জমিতেই দাহ করে দেন। পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জীব মণ্ডল বলেন, “শ্মশানঘাটে নজরদারির ব্যবস্থা তো কখনওই ছিল না। আজও নেই। এ ভাবেই চলছে। ব্লকের সমস্ত শ্মশানঘাটের একই অবস্থা।”

সাধারণত শ্মশানে দাহ করার শংসাপত্র দেখিয়েই পরবর্তীকালে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে মৃত্যুর শংসাপত্র মেলে। তবে এই সব এলাকায় সে সবেরও বালাই নেই। প্রশাসন সূত্রের খবর, কারও মৃত্যু হলে পরিবারের তরফে ২১ দিনের মধ্যে পঞ্চায়েত দফতরে কয়েকটি তথ্য দিয়ে লিখিত আবেদন করলেই মৃত্যুর শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য মৃত্যু পরবর্তী চিকিৎসকের শংসাপত্র বা শ্মশানে দাহ করার কোনও শংসাপত্রের দরকার হয় না।

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ইদানীং নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার সময়ে মৃত ব্যক্তির খাদ্য সুরক্ষার কার্ড জমা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েতের এক আধিকারিক জানান, আগে জীবনবিমার টাকা বা অন্য কারণে অনেকেই পঞ্চায়েত প্রভাব খাটিয়ে ভুয়ো মৃত্যুর শংসাপত্র তুলে নিতেন। তবে খাদ্য সুরক্ষার কার্ড জমা দেওয়ার নিয়ম আসার পরে সেই প্রবণতা কমেছে।
তবে শ্মশানে এমন অনিয়মের জেরে অপরাধ করে গোপন করার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যা বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃত ব্যক্তির পরিবার আইনি বিষয় এড়াতে পুলিশকে না জানিয়ে গ্রামের মাতব্বরদের জানিয়ে দাহ করে দেন। এ বিষয়ে বিশপুরের বাসিন্দা বসিরহাট আদালতের সরকারি আইনজীবী প্রসেনজিৎ জানা বলেন, “যে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে জানা যায় না, প্রকৃত ঘটনাটা কী। দোষী প্রমাণের অভাবে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। গ্রামবাসীদের এ বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন।”

হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, “ব্লকের শ্মশানঘাটগুলিতে পরিকাঠামো উন্নতির কাজ চলছে। তবে শহুরে এলাকার শ্মশানঘাটগুলির মতো নজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন। তবুও এই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Crematorium dead bodies Hingalganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy