পাহারা: জঙ্গলে নজরদারি। ফাইল চিত্র
এক দিকে সুন্দরবন এলাকার নদীপাড়ে লাগানো হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। অন্য দিকে, এক শ্রেণির মানুষ নির্দ্বিধায় সেই সব কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় ম্যানগ্রোভের উপকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচার চালানো হয়েছে। তাতে কতটা ফল মিলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নতুন বসানো ম্যানগ্রোভের সুরক্ষাও ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ মানুষজনের।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকে সুন্দরবন লাগোয়া কালীতলা, গোবিন্দকাটি, সর্দারপাড়া, কানাইকাটি, সাহেবখালি, লেবুখালি, যোগেশগঞ্জ, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বিভিন্ন গ্রামে নদীর চরে কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছে। ম্যানগ্রোভ রোপণের দায়িত্বে থাকা ব্লক প্রশাসনের এক অফিসার জানান, কালীতলা পঞ্চায়েতকে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের বীজ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ব্লক সূত্রেই জানা গেল, সংগৃহীত সেই বীজ হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ ব্লকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
গোবিন্দকাটি পঞ্চায়েতের শ্রীধরকাটি, মালিকান গুমটিতে কয়েক বছর আগে কালিন্দী নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। সাহেবখালির কালিন্দী নদীপাড়েও ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়। কালীতলা পঞ্চায়েতের সামসেরনগরে রায়মঙ্গল নদীর শাখা ঝিঙাখালি নদীর চরে এবং হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের ইছামতীর ধারেও কামরাঙা, গরান, সুন্দরী, হেতাল, গেঁও ইত্যাদি গাছের চারা লাগানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় মোট সতেরোটি প্রকল্পের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ হয়েছে। এক একটি স্কিমে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৭৬ হাজার ৯৬২ টাকা। এখনও পর্যন্ত মোট ৪০৮ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছে।
তবে বেশির ভাগ জায়গাতেই চারা গাছগুলির সঠিক পরিচর্যা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ। গবাদি পশুদের থেকেও গাছের ক্ষতি হয়। অনেক সময়ে দেখা যায় নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া-আসার পথে জেলেদের হাতে ম্যানগ্রোভের চারার বেশ খানিকটা ক্ষতি হয়। হিঙ্গলগঞ্জের অনেক জায়গাতেই নদীপাড়ের গাছ কেটে বসতি তৈরি হচ্ছে। ঘর তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কেটে নেওয়া এই সব গাছের কাঠ। কোনও কোনও এলাকায় চুরি করা গাছ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাছের সুরক্ষার ব্যবস্থা যে একেবারেই হয়নি, তা নয়। গবাদি পশু যাতে চারার কোনও ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বীজ রোপণের পরে জাল দিয়ে তার চারদিক ঘিরে দেওয়া হয়েছে অনেক জায়গাতেই। শুধু তাই নয়, গাছের দেখভালের জন্য অন্তত ছ’মাসের জন্য লোক নিযুক্ত করা হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ নষ্ট হলে পরিবেশের ক্ষতি হয় এবং বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে— এই বিষয় নিয়ে নাটক, গান এবং আলোচনা শিবির আয়োজনের মধ্যে দিয়েও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ নিয়মিত করে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন। টাকি, সাহেবখালি, সর্দারপাড়া এবং কালীতলা-সহ হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের বেশ কিছু জায়গায় সাধারণ মানুষকে বারবার সচেতন করার মধ্যে দিয়ে ইছামতী, কালিন্দী, রায়মঙ্গল নদীর চরে লাগানো ম্যানগ্রোভ অনেকটাই রক্ষা করা গিয়েছে। এর ফলে বেশ কয়েক জায়গায় বাঁধের ক্ষয়ও অনেকখানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। নদীপাড়ে সদ্য রোপিত গাছ রক্ষা করতে কোথাও কোথাও বনকর্মীদের পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যেমন, কুড়েখালি নদীপাড়। তবে বিস্তীর্ণ এলাকায় নজরদারির অভাব আছে বলেই অভিযোগ।
হিঙ্গলগঞ্জের যুগ্ম বিডিও সৌগত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে বারবার বিভিন্ন নদী-সংলগ্ন এলাকার মানুষদের গাছ রক্ষায় সচেতন করার কাজ হয়েছে। একমাত্র ম্যানগ্রোভই পারে ভূমিক্ষয় রোধ করতে, বাঁধের ভাঙন আটকাতে— এ কথা মানুষকে বোঝানোর পরে গাছ কাটা অনেকটাই কমেছে।’’
সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথাই বলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy