জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
দিন কয়েক আগে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজয়া সম্মিলনীতে ব্রাত্য ছিলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। সেখানে তাঁর কোনও ছবিও ছিল না। তৃণমূল নেতাদের মুখে ‘বালুদা’র নাম শোনা যায়নি। এ বার বনগাঁ শহরে তৃণমূলের ছাত্র-যুব, মহিলা, শ্রমিক সহ বিভিন্ন শাখার পক্ষ থেকে আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চেও কেউ বালুর নাম উচ্চারণ করলেন না। ছবি থাকা তো দূরের কথা! মঙ্গলবার বনগাঁ টাউন হল ময়দানে আয়োজিত ওই সম্মেলনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালন করা হয় কেক কেটে।
রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে কি তবে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা?
দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় প্রশ্নটা জোরাল ভাবে উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, জ্যোতিপ্রিয়ের নাম নিয়ে বক্তৃতা করলে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সে কারণেও সচেতন ভাবে বালুর প্রসঙ্গ তুলছেন না কেউ। দলের উপর মহল থেকে এ নিয়ে কোনও নির্দেশ এসেছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
বনগাঁ পুরসভার ২২টি ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করে এ দিন বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দিতে এসেছিলেন। নেতৃত্বের দাবি, প্রায় ১২ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। পুরনো কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। শিল্পীদের এনে গান-বাজনা হয়। চপ-মিষ্টি-রোল খাওয়ানো হয়েছে সকলকে। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শ্যামল রায়, পুরপ্রধান গোপাল শেঠ, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি নারায়ণ ঘোষ। সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল। আর কারও ছবি রাখা হয়নি। বক্তারা বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কিন্তু বালুর প্রসঙ্গ টেনে সরাসরি কেউ কোনও কথা বলেননি।
দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, আগে বনগাঁয় দলের বড় কোনও কর্মসূচি হলে জ্যোতিপ্রিয়ের ছবি রাখা কার্যত বাধ্যতামূলক ছিল। জ্যোতিপ্রিয় নিজেও দলীয় কর্মসূচিতে অসংখ্য বার বনগাঁ শহরে এসেছেন। তাঁকে নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ থাকত চোখে পড়ার মতো। কর্মসূচি শেষে নেতানেত্রীদের সঙ্গে প্রায়শই খোশগল্প করে অনেকটা সময় কাটাতেন জ্যোতিপ্রিয়।
গোপাল পরে বলেন, "দলের নির্দেশই আছে, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু এটা আমাদের বিজয়া সম্মেলন ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালন কর্মসূচি, তাই বক্তারা বালুদার নাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলেননি।" ছবি ব্যবহারের নির্দেশ তো আগেও ছিল না। কিন্তু তখনও তো বালুর ছবি দেখা গিয়েছে প্রায় সব কর্মসূচিতেই। এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দেননি কেউ।
বনগাঁ মহকুমা এক সময়ে ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের ‘খাস তালুক।’ দলের অন্দরে প্রভাবও ছিল যথেষ্ট। যে কোনও সমস্যায় নেতারা তাঁর দ্বারস্থ হতেন বলে জানাচ্ছেন দলের অনেকে। জেলা সভাপতি না থাকলেও সংগঠন তিনিই নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন বকলমে। ‘বনগাঁয় দলের ভিতরে বালুদার নির্দেশই ছিল শেষ কথা’— বলছেন দলের পুরনোদের অনেকেই। ফলে বালুর সঙ্গে দল দূরত্ব বাড়াচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছেই।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের কটাক্ষ, "জ্যোতিপ্রিয়ের ছবি না রেখে এবং বক্তৃতায় তাঁর নাম না এনে তৃণমূল প্রমাণ করে দিচ্ছে, জ্যোতিপ্রিয় চোর।" বিশ্বজিৎ এ প্রসঙ্গে পরে বলেন, ‘‘কেন্দ্র নানা ভাবে এজেন্সিকে ব্যবহার করছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে আইন আইনের পথে চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy