ছন্দে-গানে: কর্মশালায় যোগ দিল এই খুদেরা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
গানের সুরে লোকজনকে মোহিত করে রাখার বর পেয়েছিল গুপি-বাঘা। সেই গানের সুরকে কাজে লাগিয়েই ছোটদের মানসিক বিকাশের চেষ্টা হল হাবড়ায়। সম্প্রতি হাবড়ার ফুলতলা এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই উদ্যোগ করে।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় দু’বছর স্কুলে যায়নি পড়ুয়ারা। কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি। উল্টে, দীর্ঘক্ষণ মোবাইল নিয়ে থাকার ফলে অনলাইন গেম-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির শিকার হয়েছে ছোটরা। স্কুল খোলার পরেও ছোটদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ আগের চেয়ে কমেছে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষক। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের দাবি, গৃহবন্দি থেকে ছোটদের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কমেছে মনঃসংযোগ, বেড়েছে মোবাইল ও টিভির প্রতি আসক্তি। এর পরিণাম নিয়ে চিন্তায় সকলেই।
ছোটদের মধ্যে এই প্রবণতা দূর করতে এ বার উদ্যোগী হয়েছে হাবড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কর্মশালা করে মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে তারা ছোটদের মানসিক বিকাশের কাজ শুরু করেছে। রবিবার ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘ব্রেন ডেভলপমেন্ট ওয়ার্কশপ’। সেখানে ৫-১৫ বছরের ২০ জন পড়ুয়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকেরা মূলত মিউজ়িক থেরাপি, মস্তিষ্কের নানা রকম কসরতের মাধ্যমে ছোটদের তালিম দেন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলে। পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশে অভিভাবকেরাও যাতে শামিল হতে পারেন, সে জন্য তাঁদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি গৌতম দাস বলেন, ‘‘আমাদের প্রশিক্ষকেরা ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করবেন। আগামী দিনে আমাদের প্রশিক্ষকেরা স্কুলগুলিতে গিয়ে পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেবেন।’’
এ দিন পড়ুয়াদের সুরের তালে তালে নানা রকম শারীরিক কসরত করানো হয়। শেখানো হয় বেশ কিছু আদবকায়দা, তা-ও সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়েই। এরপরে তাদের কিছু শুকনো খাবার দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে দিনের শেষে পড়ুয়াদের ঘর অন্ধকার করে বিশেষ ধরনের সুর শোনানো হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শোওয়ারও ব্যবস্থা ছিল। সেখানেই গানের সুরে ঘুমিয়ে পড়ে তারা। এরপরে বিশেষ পদ্ধতিতে সকলকে ঘুম থেকে ডাকা হয়।
গৌতম বলেন, ‘‘কর্মশালায় বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মানসিক বিকাশের পাশাপাশি প্রশিক্ষকেরা বুঝে নিচ্ছেন, কোন পড়ুয়ার কোন দিকে আগ্রহ রয়েছে। কেউ হয় তো শরীরচর্চা করতে ভালবাসে, কারও পছন্দ রং-তুলি। পড়ুয়াদের আগ্রহ বুঝে তাদের সেই বিষয়গুলি শেখানো হবে। গোটা কর্মকাণ্ডই বিনামূল্যে করা হচ্ছে।’’
এ দিন চতুর্থ শ্রেণির ছেলেকে নিয়ে কর্মশালায় এসেছিলেন কমল ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘গত দু’বছরে ছেলেমেয়েরা গৃহবন্দি থেকে সব দিকে পিছিয়ে পড়েছে। পড়াশোনাতেও আগ্রহ কমেছে। এখানে ছেলেকে নিয়ে আসতে পেরে ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে, এ বার ছেলের পড়াশোনায় উৎসাহ ফিরবে।’’
কর্মশালার প্রশিক্ষক আমজাদ খান বলেন, ‘‘বাচ্চারা যাতে সময়ে সঙ্গে সঙ্গে এগোতে পারে, সে জন্য বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটনোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে পড়ুয়াদের পড়াশোনার ফল ২০ শতাংশ ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’
প্রশিক্ষণ নিতে এসে খুশি অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সায়ন পাল। তার কথায়, ‘‘এ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে খুব আনন্দ পেয়েছি। অন্য রকম একটা দিন কাটালাম। টিভি- মোবাইলের বাইরেও জীবন আছে, সেটা শিখতে পারলাম।’’
সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, ছোটদের মানসিক বিকাশ ঘটনোর মাধ্যমে অভিভাবকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হবে। এতে তাদের শরীর ও মন দুইই ভাল থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy