Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫
Suicide

মেয়েকে নিয়ে ঝাঁপ লাইনে, মৃত্যু মায়ের

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া থানার ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় রবীন্দ্র সরণি এলাকায়। জিআরপি গিয়ে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

সুস্মিতা পাল

সুস্মিতা পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

শিশু কোলে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তরুণী। চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। সে সময়ে আশেপাশের যাত্রীরা মা ও মেয়েকে রেললাইন থেকে সরিয়ে এনেছিলেন। যাত্রীরা যখন শিশুটির শুশ্রূষায় ব্যস্ত, তখন ফের অন্য একটি ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন তরুণী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া থানার ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় রবীন্দ্র সরণি এলাকায়। জিআরপি গিয়ে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বনগাঁ জিআরপি জানিয়েছে, মৃতের নাম সুস্মিতা পাল (২২)। বাড়ি গোবরডাঙায়। জিআরপি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

শিশুটিকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই আরজিকরে স্থানান্তরিত করেছেন চিকিৎসকেরা। জিআরপি জানিয়েছে, শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল।

সুস্মিতার বাপের বাড়ি বর্ধমানের পানাগড়ে। তাঁর স্বামী দেবাশিসের বাড়িতেই মুদির দোকান। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও অশান্তি বা গোলমালের কথা তাঁরা কখনও শোনেননি। কেন কোলের সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করলেন সুস্মিতা? জিআরপি ও গোবরডাঙা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েকে দুধ খাওয়া নিয়ে সোমবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়।

মঙ্গলবার সকালে মেয়েকে নিয়ে সুস্মিতা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। দেবাশিস স্ত্রীকে জানান তিনি তাঁকে বাপের বাড়ি দিয়ে আসবেন। দেবাশিস স্ত্রীর পিছু নেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মছলন্দপুর এসে সুস্মিতা স্বামীকে চলে যেতে বলেন। মেয়েও কাঁদছিল। দেবাশিস একটু আড়াল হয়েছিলেন। তারপরে আর স্ত্রী-মেয়েকে খুঁজে পাননি। রাতে পরিবারের লোকজন টিভিতে খবর দেখে ঘটনার কথা জানতে পারেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে সুস্মিতার বাপের বাড়ির লোকজন গোবরডাঙা থানায় এবং বনগাঁ জিআরপিতে এসে জানিয়েছেন, জামাইয়ের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। সুস্মিতার বাবা বিদ্যুৎ পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা নাতনিকে কাছে রাখতে চান। দেবাশিসরা তাতে রাজি হয়েছেন। সুস্মিতার পরিবারের দাবি, ছোটবেলা থেকেই মেয়ে খুব বদমেজাজি ছিলেন। রেগে গেলে মাথার ঠিক থাকত না। দেবাশিস বলেন, ‘‘অনেক বুঝিয়েও ওকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারিনি। পারলে হয় তো এত বড় বিপদ হত না।’’

কী ঘটেছিল? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েকের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে রেললাইনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন সুস্মিতা। দূর থেকে ট্রেন আসতে দেখে, মেয়েকে নিয়ে লাইনের উপরে ঝাঁপ দেন। কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশু। হাত কেটে রক্ত বের হতে থাকে তার। দূর থেকে ট্রেন চালক দেখতে পেয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। আশেপাশের মহিলারা ছুটে আসেন। মা-মেয়েকে তাঁরা রেললাইন থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসেন। শিশুটির শুশ্রূষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন মহিলারা। মা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেন সে মরতে গিয়েছিলেন মহিলাদের প্রশ্নে কোনও উত্তর দেননি সুস্মিতা। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাউন লাইনে ট্রেন এসে পড়ে। আচকমা দৌড়ে গিয়ে আবারও ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন শিশুটির মা। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তরুণীর মৃত্যু হয়। রবীন্দ্র সরণি এলাকার মহিলাদের আফসোস, সুস্মিতাকে বাঁচাতে পারলেন না তাঁরা। পূর্ণিমা মিত্র নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘প্রথমবার ট্রেনে ঝাঁপ দেওয়ার পরে আমরাই ওদের উদ্ধার করি। আমি শিশুটিকে কোলে নিই। শিশুটির আঙুল কেটে গিয়েছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর মা ফের ঝাঁপ দেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Mother with child Suicide Jumping before train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy