Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
খেতমজুরিতে টাকা বেশি, তবু  একশো দিনের কাজে ভরসা
MNREGA

 বাজেটে বরাদ্দ কমায় আশঙ্কা কাজ কমারও

লকডাউন পর্বে হাজার হাজার শ্রমিক ঘরে ফিরলে তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য একশো দিনের কাজই ছিল রাজ্য সরকারের হাতে তুরুপের তাস।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কচুরিপানা তোলার কাজ।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কচুরিপানা তোলার কাজ। ফাইল চিত্র

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪১
Share: Save:

একশো দিনের কাজে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমে হয়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে প্রায় ৩৫ শতাংশ বরাদ্দ কমায় এই প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে নানা মহলে।

এমনিতেই এই প্রকল্পে পর্যাপ্ত কাজ না পাওয়া, কাজ করেও টাকা পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করার অভিযোগ ছিলই। খেতমজুরি বা দিনমজুরির কাজে দৈনিক রোজগার একশো দিনের থেকে বেশি বলেও নানা ভাবে সমালোচনা হয়েছে এই প্রকল্পে। তা সত্ত্বেও লকডাউন পর্বে হাজার হাজার শ্রমিক ঘরে ফিরলে তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য একশো দিনের কাজই ছিল রাজ্য সরকারের হাতে তুরুপের তাস। প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছিল গত কয়েক মাসে।

বনগাঁ মহকুমার একটা বড় অংশে গ্রামের মানুষ অবশ্য জানাচ্ছেন, একশো দিনের প্রকল্পে তাঁরা আগ্রহ হারিয়েছেন। নেহাত খেতমজুরির কাজ না মিললে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ খোঁজেন অনেকে। বাজেটে বরাদ্দ কমায় সেই কাজটুকুও এরপরে কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে গ্রামের মানুষের মধ্যে। খেতমজুরির কাজ করে বাড়ি ফিরছিলেন সাহেব মণ্ডল। অতীতে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেছেন। এখন খেতমজুরির কাজ থাকলে ওই প্রকল্পে কাজ করেন না। কারণ, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত খেতে কাজ করলে তিনি পান সাড়ে তিনশো টাকা। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করলে দিনে মেলে ২০৪ টাকার মতো। সাহেব বলেন, ‘‘খেতে কাজ না থাকলে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করি।’’ আগে কাজ করতেন কেরলে। এখন এলাকাতেই আছেন।

এলাকায় পর্যাপ্ত কাজ না থাকায় সাহেবের দুই ভাই এবং ভগ্নিপতি কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছেন বলে জানালেন সাহেব। লকডাউনে বাড়ি এসেছিলেন। মাসখানেক আগে ফিরে গিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। সাহেব বলেন, ‘‘কেরলে রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়ের কাজ করলে দিনে ৯০০ ও ৬০০ টাকা পাওয়া যায়। এখানে এত টাকা কে দেবে!’’

বনগাঁর বাসিন্দা খেতমজুর রফিকুল মণ্ডলের ছেলে ইয়ানুর মালয়েশিয়ায় দস্তানা তৈরির কাজ করেন। ২০-২৫ হাজার টাকা মাসে আয় করেন সব খরচ বাদ দিয়েও। রফিকুল বলেন, ‘‘এখানে কাজ নেই। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করলে বেশি টাকা পাওয়া যায় না। তবুও আমরা করি। কিন্তু বাজেট কমল বলে শুনেছি। এখন কি আর কাজ পাব?’’

মণিগ্রামের বাসিন্দা আজগর মণ্ডল, রূপচাঁদ মণ্ডল, ইদ্রিস মণ্ডল জানালেন, একশো দিনের প্রকল্পে এক বছর আগে কাজ করলেও এখনও টাকা পাননি। বনগাঁর বাসিন্দা ১৭ জন মানুষ লকডাউনের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ গিয়েছিলেন ধান রোয়ার কাজ করতে। দিন কয়েক আগে ফিরেছেন। ওখানে ৩ বিঘে জমিতে ধান রোয়ার কাজ করলে পাওয়া যায় ২৬০০ টাকা। এখানে মেলে ১২০০ টাকা। তাঁদেরই একজন মনো সেন বলেন, ‘‘এখানে আমাদের একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয় না। কাজ করলেও টাকা পাওয়া যায় না।’’ তাঁদের আশঙ্কা, বাজেট কমায় এ বার হয় তো কাজ একদমই পাওয়া যাবে না। সুকদেব সেন নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে কাজ করেছি। এখনও টাকা পাইনি। আর হয় তো পাবও না।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক বিডিও বলেন, ‘‘বাজেট কমানোয় প্রভাব অবশ্যই পড়বে প্রকল্পের কাজে। সকলকে কাজ দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে বছরের প্রথম দিকে সমস্যাটা বোঝা যাবে না। শেষের দিকে মানুষ কাজ চাইলে তখন জটিলতা দেখা দিতে পারে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি পরিবার বছরে একশো দিন কাজ পেতে পারে। কেউ কাজ চাইলে আমরা কাজ দিতে বাধ্য। কিন্তু বাজেট কমায় এমনও হতে পারে, মানুষ কাজ করার পরেও টাকা আটকে থাকবে।’’

প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, আপাতত যে সব কাজ চলছে, তাতে প্রভাব পড়ার কথা নয়। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মূলত মাটি কাটা, পুকুর কাটা, নিচু জমি উঁচু করা, বৃক্ষরোপণ, খাল-নদী সংস্কারের কাজ হয়। এ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে এক সঙ্গে এই প্রকল্পকে যুক্ত করা হয়। সম্পদ সৃষ্টি করা হয়। জেলার এক বিডিও মনে করছেন, এ রাজ্যে বাজেট কমানোর প্রভাব পড়বে না। কারণ, এ রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ অনেক রাজ্যের থেকে বেশি। তবে শ্রমিকেরা আগের তুলনায় কাজ কম পাবেন বলে মনে করছেন তিনিও। প্রশাসনের এক কর্তার মতে, বরাদ্দ কমায় পরিযায়ী শ্রমিক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, অনেকেই এখানে কাজ পাচ্ছেন। তাঁরা বাইরে যাচ্ছেন মূলত আরও বেশি টাকা আয় করতে। সেখানে ওভারটাইম করেও অতিরিক্ত টাকা আয় করা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

MNREGA Budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy