পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকছেন বাংলাদেশি যাত্রীরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
সংখ্যা কমেছে। কিন্তু নানা প্রয়োজনে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে সংখ্যালঘু বাংলাদেশিদের এ দেশে আসা বন্ধ হয়নি। চোখ-মুখে আতঙ্ক নিয়েই ওঁরা যাতায়াত করছেন। উদ্বাস্তু হওয়ার ভয়ও ওঁদের পেয়ে বসেছে।
বৃদ্ধ আনন্দ বালার কথাই ধরা যাক। বরিশালে বাড়ি। রবিবার এ দেশে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছেন। ১৯৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছেন বৃদ্ধ। বয়সের কারণে এখন কোনও কাজ করতে পারেন না। এ দেশে পেট্রাপোল সীমান্তে একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন। চোখ-মুখে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ। বললেন, ‘‘চোখের সামনে যে দেশটা স্বাধীন হতে দেখলাম, সেই দেশের এমন ভয়াবহ পরিণতি হবে, ভাবতেই পারছি না।’’
আনন্দ মনে করেন, আচমকা দেশের পরিস্থিতি খারাপ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। লাগাতার অত্যাচার নেমে আসছে সংখ্যালঘুদের উপর। তাঁদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বসবাসের পরিস্থিতি নেই। জন্মভিটে ছেড়ে জমি-বাড়ি বিক্রি করে এ দেশে চলে আসা ছাড়া কোনও উপায় নেই। পুলিশ প্রশাসন কিছুই করছে না।’’
গোপালগঞ্জের এক বৃদ্ধেরও একই অসহায়তার কথা, ‘‘জন্মভিটে ছেড়ে কারও এই বয়সে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আমরা নিরুপায়। দেশে আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে।’’ মণিরামপুরে এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘সামনে বাংলাদেশে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন হয়ে গেলে আমাদের উপরে অত্যাচার আরও বাড়বে। আমরা চাই, ভারত আমাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিয়ে আশ্রয় দিক।’’
যশোর থেকে এ দেশে এসেছেন সরোজকুমার ঘোষ। তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে যা দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। ও দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক, পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন। যদি দেশে ফিরলে অত্যাচার নামে!
এ দেশ থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফিরছিলেন সলমান হোসেন। তিনি আবার অন্য সমস্যার কথা তুললেন, ‘‘আনাজ-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকারি মদতে ভারত সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক।’’
এ দেশে আসা বাংলাদেশিদের বেশির ভাগেরই ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। তাই অনেকেই দেশে ফিরছেন। ও দেশে ফেরার পথে এক সংখ্যালঘু যুবক জানিয়ে গেলেন, ‘‘জানি না আর কখনও এ দেশে আসতে পারব কি না! তবে, ভারত সরকারের কাছে আর্জি, আমাদের বাঁচাতে পদক্ষেপ করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy