অপরিচ্ছন্ন: আগাছায় ঢাকা জমা জল মশার বংশবৃদ্ধির জায়গা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ডেঙ্গির মশা ঢুকছে এ দেশে। এই তথ্য জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত-লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নানা প্রান্তে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গির প্রকোপও ছড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণের কথা জানানোর পরে প্রশ্ন উঠেছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় মশা রুখতে কতটা তৎপর প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, পরিস্থিতি বেশ ঢিলেঢালা।
সীমান্ত-লাগোয়া জনপদ বাগদা ব্লকের উত্তর বয়রা। ঢিল ছোড়া দূরত্বে ও পার বাংলার ভূখণ্ড। ২০১৭ সালে উত্তর বয়রা এলাকাতেই ছড়িয়েছিল জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন। তারপর থেকেই বর্ষা এলে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। জানা গেল, ইতিমধ্যেই অনেকে জ্বরে আক্রান্ত। এ বার এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত বা প্রশাসন কারও পক্ষ থেকেই মশা মারতে তেমন পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় হরিতলা গ্রামে কথা হচ্ছিল কয়েক জন প্রবীণ বাসিন্দার সঙ্গে। কালীপদ ঘোষ, সুবোধ সরকার, কাশীনাথ বিশ্বাসের মতো প্রবীণেরা জানালেন, এই মরসুমে পঞ্চায়েত থেকে মশা মারতে তেল, ব্লিচিং, চুন কিছুই ছড়ানো হয়নি। মশার উপদ্রবে দিনের বেলাতেও খালি গায়ে থাকা যাচ্ছে না। কালীপদ বলেন, ‘‘আমার দুই নাতনি ও বড় ছেলে জ্বরে পড়েছে। রক্ত পরীক্ষা এখনও করা হয়নি। জানি না কপালে কী আছে।’’
বছর দু’য়েক আগে জ্বরে আক্রান্ত যুবক অভিজিৎ প্রামাণিকের মৃত্যু হয়েছিল। ছেলের কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মা শেফালি। বললেন, ‘‘তখন আগে ভাগে মশা মারার কাজ শুরু হলে হয় তো ছেলেটাকে মরতে হত না। এ বারও মশা মারতে দেখছি না।’’
গোটা এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, ঝোপ-জঙ্গলে ছেয়ে আছে। ডোবার জলে মশার লার্ভা ভেসে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষ নিজেরা উদ্যোগ করে কিছু বন-জঙ্গল সাফ করেছেন। তবে যত্রতত্র থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা গেল। এক মহিলা দোকান থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে থালা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দেখা হতে বললেন, ‘‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা৷ যাবে না, এমন কথা তো শুনিনি। দোকান থেকেই তো দিল’’
সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেরই মতে, মুখ্যমন্ত্রী সাবধানতার কথা বললেও সীমান্তের গ্রামগুলিতে জোরকদমে এখনও মশা মারা, বন-জঙ্গল সাফাই, নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজ তেমন হচ্ছে না।’’
বয়রা, রনঘাট, সিন্দ্রাণী, আষাঢ়ু, বাগদা, ঘাটবাওর, ছয়ঘরিয়া, ঝাউডাঙা, সুটিয়া, রামনগর পঞ্চায়েতগুলি একেবারে সীমান্ত-লাগোয়া। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, ওই সব এলাকাতেও ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে এখনও গতি আসেনি। মানুষও সচেতন নন।
বাড়ির মধ্যেই ডোবা রয়েছে। তাতে জল জমে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সুটিয়া ও রামনগর পঞ্চায়েত এলাকায় ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিতে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত দিন পঞ্চায়েত হাত গুটিয়ে বসেছিল। সম্প্রতি মশা মারার কাজ শুরু হয়েছে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘সীমান্তবর্তী ওই দু’টি পঞ্চায়েতকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। মশা মারার কাজ আমরা আরও জোরদার ভাবে শুরু করেছি।’’
সীমান্তের মানুষেরা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়ে। ফলে ডেঙ্গির আতঙ্ক তাঁদের আরও বেড়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ডেঙ্গি মশা বাংলাদেশ থেকে ঢুকে পড়া অসম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কার পরে তাঁরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সীমান্তে পাহারারত এক বিএসএফ জওয়ান বলেই ফেললেন, ‘‘চোরাচালান বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু মশাদের চোরাপথে ঢুকে পড়া আটকাব কী ভাবে!’’ সীমান্তবর্তী মহকুমা বনগাঁ। ইতিমধ্যেই জ্বর-ডেঙ্গিতে মানুষ আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরসুমে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে অ্যালাইজা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৫২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি ভাবে পরীক্ষার হিসাব ধরলে সংখ্যাটা আরও বেশি। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি আক্রান্তদের একটা বড় অংশের মানুষ কর্মসূত্রে বাইরে থাকতেন। আবার অনেকে কর্মসূত্রে বনগাঁয় থাকেন। গাইঘাটা ব্লকের সে সমস্ত এলাকা হাবড়া থানা-লাগোয়া সেখানেও জ্বর ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। বনগাঁ পুরসভা এলাকাতেও মশা মারার কাজ গতি পায়নি। পুরসভার সাম্প্রতিক ডামাডোলই এর কারণ বলে মনে করছেন পুরবাসী। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সব এলাকা থেকে ডেঙ্গির খবর মিলছে, সেখানে আরও বেশি করে মশা মারা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। মশার লার্ভা খুঁজে বের করে তা নষ্ট করা হচ্ছে। মশা মারার তেল, চুন ছড়ানো হচ্ছে। বন-জঙ্গল সাফাই, জমা জল পরিষ্কার করা হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে ডেঙ্গি মোকাবিলায়। মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সর্বত্র মশা মারতে জোরকদমে কাজ শুরু হয়েছে। সীমান্ত-লাগোয়া এলাকাগুলির উপরে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’
সীমান্তের বাসিন্দাদের আক্ষেপ, এমন পদক্ষেপ আগেভাগে কেন নেওয়া হল না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy