বিক্ষোভ: অশোকনগরের গুমায় বিডিও অফিসের সামনে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র
আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত নন তাঁরা। তবুও সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পঞ্চায়েতের ওই সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই ঢুকেছে বলে অভিযোগ উঠল হাবড়া ২ ব্লকের গুমা ২ পঞ্চায়েত এলাকায়।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। অথচ পঞ্চায়েত সদস্যদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও টাকা পেয়েছেন। ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপি সদস্যেরা আছেন। বহু পঞ্চায়েত সদস্য ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে গ্রামের বহু মানুষের অভিযোগ। গোটা ঘটনায় তদন্তের দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। বিজেপিও একই দাবি তুলেছে। বৃহস্পতিবার হাবড়া ২ বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখায় তারা। স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বিডিও মনোতোষ রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত যাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে, তাঁদের নামের তালিকা নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুমা ২ পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৯। তৃণমূল ১২টি, সিপিএম ৩, বিজেপি ২ এবং নির্দলের ২টি আসন। অভিযোগ, বেশির ভাগ সদস্যেরই অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার করে টাকা ঢুকেছে। কেউ নিজের নামে নিয়েছেন, কেউ আত্মীয়স্বজনদের নামে টাকা নিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি। বাসিন্দাদের চাপে এখন অবশ্য ডান বাম সব দলের কিছু পঞ্চায়েত সদস্য বিডিওর কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা টাকা ফেরত দিতে চান। শাসকদলের দুই সদস্য অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা টাকা নেবেন না। তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি।
প্রধান ও উপপ্রধানের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রধান জেসমিন গাজির স্বামী তৃণমূল নেতা মনির গাজি বলেন, ‘‘আমাদের দলের যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, কেউ টাকা তোলেননি। এখন ইন্টারনেটের যুগ। চক্রান্ত করে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য ও কর্মীদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, মোবাইলে ব্যাঙ্কের মেসেজ দেখে তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন। সকলকে বলা হয়েছে, টাকা না তুলতে। অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘উপপ্রধানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা ঢোকেনি। তাঁর দুই ভাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। তাই তাঁরা টাকা পেয়েছেন। দলের পঞ্চায়েত সদস্য যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, তাঁরা বিডিও-র কাছে চিঠি দিয়ে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা টাকা ফেরত দিতে চান।’’
সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য গৌতম দাসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণে ২০ হাজার টাকা ঢুকেছে। তিনি টাকা ফেরত দিতে চেয়ে বিডিওর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। চিঠিতে গৌতম বলেন, ‘‘আমাকে অন্ধকারে রেখে আমার অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমার কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় আমি ওই টাকা ফেরত দিতে চাই। পরিকল্পিত ভাবে আমাকে ফাঁসাতেই ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। আমি বিডিওর কাছে তদন্তের দাবি করেছি।’’
সিপিএমের দাবি, শাসকদলের নেতা কর্মীরা নিজেদের দুর্নীতি অন্যের ঘাড়ে চাপাতে সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্যদের নামও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘তৃণমূল নিজেদের পাপ আমাদের ঘাড়ে চাপাতে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যদের পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়েছিল, সাম্মানিক দেওয়া হবে, আপনাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিন। আমাদের কেউ ক্ষতিপূরণের টাকার আবেদনও করেননি। সকলেই টাকা ফেরত দিতে চেয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। গোটা বিষয়টি আমরা তদন্তের দাবি করেছি বিডিওর কাছে।’’
বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য সচ্চিদানন্দ মণ্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকেছে। তিনিও বিডিওর কাছে লিখিত আবেদন করে ওই টাকা ফেরত দিতে চেয়েছেন। বিজেপির অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক স্বপন দে বলেন, ‘‘আমাদের একজন পঞ্চায়েত সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। সেটি পঞ্চায়েত থেকে সাম্মানিক পাওয়া অ্যাকাউন্ট। তিনি টাকা ফেরতও দিচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy