প্রতীকী ছবি
বেশি রোজগারের আশায় ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন বাসন্তীর ভরতগড়ের সুজিত মণ্ডল। কিন্তু যে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তা হয়নি। টাকার অভাবে বাড়িও ফিরতে পারছেন না।
শুধু সুজিত নন, এমন অবস্থা বাসন্তীর বহু যুবকের। পেটের টানে ভিনরাজ্যে বা ভিন দেশে গিয়ে বিপদে পড়ছেন অনেকেই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং, বাসন্তী, ভাঙড়, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, মগরাহাট-সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ কাজের তাগিদে ভিনরাজ্যে যান। এ সব এলাকার অধিকাংশ মানুষ কেরালা, দিল্লি, মুম্বই, আন্দামান-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কাজে যান। মূলত দিল্লি, মুম্বই ও কেরলে রাস্তা তৈরি, নির্মাণের কাজই তাঁরা বেশি করেন। ওই সব রাজ্যে একদিনের মজুরি প্রায় দেড় হাজার টাকা। যা জেলার তুলনায় অনেকটাই বেশি। জেলার প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলার এই সব এলাকার গরিব সাধারণ মানুষ বছরের বেশির ভাগ সময় নিজের এলাকায় কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন বলে জানিয়েছে পরিবারগুলি। তাঁরা দালাল মারফত ভিনরাজ্যে বা ভিনদেশেও কাজে যান। দালালরা নিজেদের খরচে ওই সব শ্রমিকদের ভিনরাজ্যে কাজে নিয়ে যায়। আগে সেখানে গিয়ে শ্রমিকরা কাজ করে দালালের টাকা-পয়সা শোধ করেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই সব শ্রমিকদের যে সব কাজ দেওয়া হবে বলে নিয়ে যাওয়া হয়, আদতে সেই কাজ তাঁদের দেওয়া হয় না। টাকাপয়সা না থাকায় বাড়িও ফিরতে পারেন না। দালালদের কাছে নিজেদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড কিংবা পাসপোর্ট জমা রাখতে হয়। ফলে পালিয়ে আসতেও পারেন না অনেকে।নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্য এখন উত্তপ্ত। যে কারণে ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনও উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে সুজিতের মা মালা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। এলাকায় সারা বছর কাজ না থাকায় বাড়ির একমাত্র ছেলে বাইরে কাজে গিয়েছে। কিন্তু এখন দুশ্চিন্তায় আছি।’’ জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘কাজের তাগিদে আমাদের জেলার অনেকেই অন্য রাজ্যে গিয়েছেন। আমরা সব সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। প্রয়োজনে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বাসন্তীর রানিগড় জ্যোতিষপুরের এক বাসিন্দার সহযোগিতায় আন্দামানে আনাজের ব্যবসার কাজে যান সুজিত। সেখানে গিয়ে দেখেন, আনাজ বিক্রির কাজ নেই। প্রায় এক মাস কোনও কাজ না পেয়ে বসে থাকতে হয় তাঁকে। এ দিকে, টাকাও শেষ হয়ে যায়। মালিকের কাছে ধার দেনা হয়ে যায়। পরে অন্য এক মালিকের কাছে দৈনিক ৪৮০ টাকা মজুরিতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তিনি। টাকা মিটিয়ে বাড়ি ফেরার মতো অবস্থা নেই। একই অবস্থা বাসন্তীর ভরতগড়ের বাসিন্দা বাবলু নাইয়াও। তিনিও আন্দামানে আটকে পড়েছেন। সুজিত ফোনে বলেন, ‘‘যে কাজে এসেছিলাম, তা করতে পারিনি। কোনও রকমে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে টাকা জমাচ্ছি। বাড়ি ফেরার চিন্তাভাবনা করছি।’’
বছর দু’য়েক আগে ভাঙড়ের নিজামুল হক দালাল মারফত দুবাইয়ে কাজে যান। তাঁকে সেখানকার একটি শপিংমলে কাজ দেওয়া হবে বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শপিংমলে আনাজ বিক্রির সেলস বয় হিসেবে কাজ করার কথা বলা হলেও আদতে তাঁকে কাজ দেওয়া হয় মুরগি কেটে মাংস ড্রেসিং করার। তিনি ওই কাজ করতে অস্বীকার করলে তাঁকে বলা হয়, দুবাইয়ে আসার খরচের টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারবেন না। পরে কাজ করে টাকা শোধ করে দেশে ফিরেছিলেন নিজামুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy