Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
একাদশের বার্ষিক পরীক্ষাতেও অনুপস্থিত অনেক ছাত্রছাত্রী
Students

Students: কেউ কাজেকর্মে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যে, কেউ ব্যস্ত ঘরকন্যা নিয়ে

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনা আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় নাবালিকা পড়ুয়াদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেকগুণ বেড়েছে। অনেকে পড়া ছেড়ে দিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪০
Share: Save:

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের পরে এ বার একাদশের বার্ষিক পরীক্ষাতেও দেখা গেল বহু ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত। কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে এই পরিস্থিতি সামনে এসেছে।

মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে বহু ছাত্রী আবেদনপত্র পূরণ করেও পরীক্ষায় বসেনি। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনা আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় নাবালিকা পড়ুয়াদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেকগুণ বেড়েছে। অনেকে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। বেশ কিছু ছাত্রও পরীক্ষায় বসেনি। এদের মধ্যে অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছে। কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। বেশিরভাগই আর পড়াশোনায় ফিরতে চায় না।

একই কারণে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও পড়ুয়াদের অনুপস্থিতির এই উদ্বেগজনক ছবি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ।

এ বছর একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হতেই দেখা গেল, উপস্থিতির সংখ্যা বেশ কম। শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন যারা একাদশ শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছে তারা অষ্টম শ্রেণি থেকে সোজা একাদশ শ্রেণিতে উঠেছে। বেশির ভাগেরই এই দু’বছর পড়াশোনার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিল না। স্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা হলেও গ্রামাঞ্চলে তা বিশেষ কার্যকর হয়নি। ফলে অনেকে পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়েছে। অনেক ছাত্র বাইরের রাজ্যে কাজে গিয়ে আর ফিরতে চায় না বলে জানিয়েছে। তা ছাড়া, পড়াশোনার বদলে উপার্জন করুক ঘরের ছেলে, চাইছেন অনেক অভিভাবকও।

অনুপস্থিত ছাত্রীদের বেশিরভাগের নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা। কিছু ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির আপত্তি, কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রীর নিজের অনাগ্রহে বন্ধ হয়েছে পড়াশোনা। ধবলাট লক্ষ্মণ পরবেশ হাইস্কুলে এ বছর একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র পূরণ করেছে ২১১ জন ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে ১৩ জন ছাত্র ও ১৬ জন ছাত্রী অনুপস্থিত।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু গায়েন বলেন, ‘‘যারা পরীক্ষা দেয়নি, তারা সকলে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। আমরা প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ছেলেদের বেশিরভাগ বাইরে কাজে চলে গিয়েছে। মেয়েদের প্রায় সকলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এদের কেউই আর পড়াশোনা করতে চায় না।’’

গঙ্গাসাগর শ্রীধাম হাইস্কুলে এ বছর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২২ জন। এদের মধ্যে ৫ জন ছাত্র এবং ১১ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডল বলেন, ‘‘অনুপস্থিত সব ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তারা কেউ আর পরীক্ষা দেবে না। অনেকেরই শ্বশুরবাড়িতে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি আছে। অনেকের এলাকা থেকে দূরে বিয়ে হয়েছে। তারা এত দূরে এসে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী নয়। ছেলেদের মধ্যে অনেকে বাইরে কাজে চলে গিয়েছে। বাকিরা বাড়িতে থাকলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় না।’’

বামনখালি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে এ বছর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬৪ জন। এদের মধ্যে ১৩ জন ছাত্র ও ১৭ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অনুপস্থিত। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র দাস জানালেন, অনুপস্থিত ছাত্রীদের সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছাত্রেরা চেন্নাই, গুজরাত-সহ নানা জায়গায় কাজে চলে গিয়েছে।

খানসাহেব আবাদ হাইস্কুলে এ বছর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২২১ জন। এদের মধ্যে ৯ জন ছাত্র এবং ১১ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অনুপস্থিত।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস জানান, সকলেই পরীক্ষা দেবে বলে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, মেয়েদের প্রায় সকলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কারও বাড়িতে আর্থিক সঙ্কট ছিল। কেউ আবার পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। ছেলেরা ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে।

শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার ক্ষতি তো হয়েছেই— পাশাপাশি নাবালিকা বিয়ের ঘটনা বেড়েছে। স্কুল খোলা থাকলে কন্যাশ্রীর সদস্যদের মাধ্যমে বিয়ের বিষয়ে আগে থেকেই খোঁজখবর মিলত। বহু বিয়ে এ ভাবে বন্ধ করাও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে চুপিসারে বহু নাবালিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিবারগুলির আর্থিক অনটনের কারণে ছেলেদের কাজে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে স্কুলছুটে বেড়েছে।

যদিও শিক্ষকেরা মনে করছেন, এখন স্কুল খুলে যাওয়ায় আগামী বছর স্কুলছুট-সহ নাবালিক বিয়ের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পুলিশ জেলার নারী ও শিশু পাচার এবং বাল্যবিবাহ রোধের প্রোগ্রাম অফিসার সুব্রত পাণিগ্রাহী বলেন, ‘‘গত দু’বছর বাল্যবিবাহের সচেতনতা শিবির অনুষ্ঠিত হয়নি। এই সময়ের মধ্যে সুন্দরবন পুলিশ জেলায় ৬০০-র বেশি নাবালিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগও এর অন্যতম কারণ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Students Pandemic Covid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy