Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Teacher Crisis

বিজ্ঞান পড়ানোর যোগ্য শিক্ষকই নেই বহু স্কুলে

দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে জেলার স্কুলগুলি। উৎসশ্রী প্রকল্পের পর এই সমস্যা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি হাই কোর্ট ও সরকারি নির্দেশের ভিত্তিতে শহর থেকে জেলার স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এসএসসি সূত্রে খবর, কলকাতার প্রায় ৫৮০ জন শিক্ষককে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলে বদলির সুপারিশপত্র তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরের স্কুলগুলির শিক্ষক-ঘাটতির চিত্র খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

Microscope in a Bio Laboratory

যোগ্য শিক্ষকের অভাব। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫১
Share: Save:

গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলের মতো শহর বা শহর-লাগোয়া বহু নামী হাইস্কুলও দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। বহু স্কুলেই ভরসা আংশিক সময়ের শিক্ষক। যে স্কুলের সেই ক্ষমতা নেই, সেখানে বন্ধ উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখা। কোনও স্কুলে আবার বাংলার শিক্ষকই পড়াচ্ছেন ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃত। কম্পিউটার প্রশিক্ষক পড়াচ্ছেন বিজ্ঞান।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে শুধু হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২ ব্লকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষকের শূন্য পদ তিনশোর বেশি। জেলার মোট শূন্য পদ জানতে চাইলে উত্তর ২৪ পরগনার ডিআই বারাসত কৌশিক রায় বলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত তথ্য বলা যাবে না।’’ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জেলার এক শিক্ষা দফতরের আধিকারিক লঘু চালে বলেন, ‘‘শিক্ষক সঙ্কটের চিত্র এতই করুণ, তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রশ্ন করলেও উত্তর মিলবে কি না সন্দেহ!’’

সন্দেশখালি থানার দ্বারিরজাঙ্গাল বনমালী বিদ্যাভবন স্কুল সূত্রের খবর, সেখানে ২ জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। এক জন বাংলার এবং অন্য জন কর্মশিক্ষার। বাংলার শিক্ষক পড়ান ইতিহাস, সংস্কৃত। কর্মশিক্ষার শিক্ষক পড়ান ভূগোল, অঙ্ক, ইংরেজি। কম্পিউটার প্রশিক্ষক পড়ান জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান। পার্শ্বশিক্ষক নেই। আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখার আর্থিক ক্ষমতা নেই স্কুলের। এই অবস্থায় স্কুল চালানো কঠিন হয়ে উঠেছে। দু’টি শ্রেণিকক্ষে পঞ্চম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের বসানো হয়। যখন এক জন শিক্ষক অফিসের কাজে বাইরে যান বা ছুটি নেন, তখন স্কুলের পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাধন সরকার বলেন, ‘‘স্কুলে শিক্ষক না থাকায় ক্লাস চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এখানে১৬৫ জন পড়ুয়া আছে। সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে।’’

এই ব্লকের অন্যতম বড় স্কুল আতাপুর কেনারাম হাইস্কুল। এখানে স্থায়ী শিক্ষক আছেন ৭ জন। পদ শূন্য ২৩টি। পড়ুয়ার সংখ্যা ১৮৩৫। বাংলা, সংস্কৃত, ইতিহাস, জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান, রসায়নের কোনও শিক্ষক নেই। ফলে ২০২১ সালে স্কুলে বিজ্ঞানের শাখা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ক্লাস চালাতে ৭ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন রায় বলেন, ‘‘স্কুলের যা আয়, আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখতেই সব খরচ হয়ে যাচ্ছে। স্কুলের উন্নয়নের কাজ করা যাচ্ছে না। ২০১৯ সাল থেকে অনেক শিক্ষক চলে গিয়েছেন বিভিন্ন কারণে।’’

এই ব্লকের দাউদপুর এইচ এল শিক্ষানিকেতনের মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা চলছে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের উপরে নির্ভর করে। স্থায়ী শিক্ষক আছেন ৪ জন।শূন্য পদ ১৫টি। ১০ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করতে হয়েছে। এখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৩০ জন।

একই অবস্থা সন্দেশখালি রাধারানি হাইস্কুলের। এখানে শূন্য পদ ২০টি। বিজ্ঞান শাখার কোনও শিক্ষক নেই। গত কয়েক বছর বিজ্ঞান বিভাগে দু’এক জন করে পড়ুয়া থাকলেও ২০২৩ সালে কেউ আর ভর্তি হয়নি।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সাহেবখালি নিত্যানন্দ হাইস্কুলেও শিক্ষকের অভাবে গত কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞান শাখায় আর কেউ ভর্তি হয় না। এই স্কুলে আছেন ৮ জন শিক্ষক। ১৭টি পদ শূন্য। জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান, রসায়ন, দর্শন, ইতিহাসের কোনও শিক্ষক নেই। শিক্ষকের অভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তুলে দিতে হয়েছে। অন্য বিষয়ে মাত্র এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন।

শহরের স্কুলগুলির মধ্যে টাকি এসএল গার্লস স্কুলে শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ২২টি। পড়ুয়া ১৯১১ জন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েক জন শিক্ষিকা বিভিন্ন ক্লাস নেন। এ ছাড়া, ১০ জন আংশিক সময়ের শিক্ষিকা রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষকের অভাব প্রকট বলে জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

টাকি গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আয়ুব আলি গাজি জানান, তাঁদের স্কুলে শিক্ষকের ১২টি পদ শূন্য। বসিরহাটের এইচএমডি গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী চট্টোপাধ্যায় জানান, শিক্ষকের ১৬টি পদ শূন্য। পড়ুয়া ২৮০০ জন। অথচ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাত্র এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন। একই অবস্থা বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট হাইস্কুল ও বসিরহাট টাউনের। বাদুড়িয়ার চাতরা নেতাজি বালিকা শিক্ষানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা ঘোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একাধিক বিষয়ে শিক্ষক নেই। এ দিকে, পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২০০০। স্কুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষকও নেই। খুব সমস্যা হচ্ছে ক্লাস চালাতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Crisis Hasnabad Science Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE