অমিল: বনগাঁয় এই টার্মিনাসে মেলে না কলকাতা যাওয়ার বাস। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
বনগাঁ মহকুমার হেলেঞ্চা বাজারে একটি রেস্তরাঁ চালান স্থানীয় বাসিন্দা ভজন মধু। মালপত্র আনতে তাঁকে মাঝে মধ্যেই কলকাতার বড়বাজারে যেতে হয়। হেলেঞ্চা থেকে অটো ধরে বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জে আসেন ভজন। ভাড়া লাগে ৩০ টাকা। মতিগঞ্জ থেকে টোটোয় ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছন বনগাঁ স্টেশনে। সেখান থেকে ২০ টাকা দিয়ে ট্রেনে টিকিট কেটে পৌঁছন শিয়ালদহ। সব মিলিয়ে খরচ হয় ১৩০ টাকা। ভোরে রওনা দিতে হয়। বাগদা থেকে কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি কোনও বাস পরিষেবা থাকলে যাতায়াতে অনেক সুবিধা হত বলে মনে করেন ভজন।
ভজনের মতো বাগদা ব্লকের হাজার হাজার মানুষকে রোজ নানা প্রয়োজনে কলকাতায় যেতে হয়। কিন্তু বাস পরিষেবা না থাকায় নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁদের।
বাগদায় রেলপথ নেই। রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগদায় রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল। জমি অধিগ্রহণের জন্য মাপজোকের কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু কাজ আর এগোয়নি।
বাগদা থেকে কলকাতার ধর্মতলার দূরত্ব ১০২.৫ কিলোমিটার। বাগদার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি বাস পরিষেবা চালু করুক প্রশাসন। বাসিন্দারা জানান, অতীতে বাগদার দত্তপুলিয়া থেকে আলমপুর পর্যন্ত সরাসরি বাস পরিষেবা ছিল। বহু মানুষ যাতায়াত করতেন। কয়েক বছর আগে সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাগদা থেকে হাওড়া পর্যন্ত বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল। কয়েক মাস আগে সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে মানুষের যাতায়াত সমস্যা আরও বেড়েছে।
কেবল বাগদা নয়, বনগাঁ শহর থেকেও কলকাতা পর্যন্ত কোনও বাস পরিষেবা নেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাম আমলে বনগাঁ শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত সরাসরি বাস পরিষেবা ছিল। কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসগুলিতে প্রচুর ভিড় হত।
বনগাঁ শহর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত দূরত্ব ৭৯.৫ কিলোমিটার। বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেনেই বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয় মানুষকে। তাঁরা চান, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি বাস চালু হোক। এখন বনগাঁ শহরে নিউমার্কেট এলাকা থেকে বাস চলে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। কিন্তু সেই বাস বিরাটি থেকে অন্য পথ ধরে। সরাসরি মূল শহরে যাওয়া যায় না। অনেকেরই তাতে প্রয়োজন মেটে না।
গোপালনগর থানার নহাটা এলাকা থেকে হাওড়া পর্যন্ত বাস চলত। কয়েক মাস আগে সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নহাটার বাসিন্দা তথা যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘তিন মাস আগে বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের কলকাতায় যেতে হলে অটোয় ২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে চাঁদপাড়া স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতে হয়। শিয়ালদহ থেকে সন্ধ্যার মধ্যে দ্রুত ফেরার ট্রেন ধরতে হয়। রাত হয়ে গেলে বাড়ি ফেরার অটো পাওয়া যায় না। আমরা চাই, বাস পরিষেবা চালু হোক।’’
একই পরিস্থিতি গাইঘাটার মানুষের। তাঁদের অটো, ভ্যান, টোটোয় করে চাঁদপাড়া, ঠাকুরনগর, গোবরডাঙা বা হাবড়া স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতে হয় কলকাতায় যেতে হলে।
বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, ‘‘বনগাঁ মহকুমার কয়েক লক্ষ মানুষকে কলকাতায় যেতে হয়। অথচ, কোনও বাস পরিষেবা নেই। এতদিনে রাজ্য সরকার কেন কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি বাস পরিষেবা চালু করতে পারল না? এটা ওদের ব্যর্থতা। বিধানসভায় আগামী অধিবেশনে আমি বনগাঁ-কলকাতার মধ্যে সরাসরি বাস পরিষেবা চালু করার বিষয়টি তুলব।’’
বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বাগদা থেকে হাওড়া বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছিল না। বনগাঁ মহকুমার মানুষ বাসের থেকে ট্রেনে করে কলকাতায় যেতে বেশি পছন্দ করেন। সঙ্কীর্ণ যশোর রোডের যানজট পেরিয়ে বাসে কলকাতায় পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘মানুষের মধ্যে বাসের চাহিদা থাকলে আমি বিষয়টি নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy