অস্বাস্থ্যকর: কদম্বগাছির কাছে বারাসত-টাকি রোডের পাশে জঞ্জালের স্তূপ। নিজস্ব চিত্র
করোনার সংক্রমণ উত্তরোত্তর বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভয় রয়েছে ডেঙ্গির হানারও। এই পরিস্থিতিতে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে সরকারের তরফে চলছে লাগাতার প্রচার। কিন্তু তা সত্ত্বেও উত্তর শহরতলির ঘন জনবসতিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় জমে রয়েছে নোংরার স্তূপ। নিকাশির সমস্যা থাকায় বহু জায়গায় নর্দমায় জমে রয়েছে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য জল। সেই জলে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। কলকাতার কাছেই বারাসত শহরের আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের এখন এমনই দুরবস্থা।
কিন্তু কেন?
অভিযোগ, পুর এলাকায় নোংরা ফেলার জন্য ভ্যাট থাকলেও বেশির ভাগ পঞ্চায়েত এলাকাতেই তা নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানদের বক্তব্য, ভ্যাট তৈরি করা এবং সেখানে ময়লা ফেলে আসার জন্য আলাদা সাফাইকর্মী নিয়োগের তহবিল নেই। কারও কারও আবার যুক্তি, এলাকায় ভ্যাট করতে গেলে নাকি স্থানীয় বাসিন্দারাই বাধা দিচ্ছেন। এই সমস্ত গেরোয় পড়ে নোংরা আর আবর্জনায় ভরে থাকছে বহু এলাকা। ভ্যাট না থাকায় কোথাও কোথাও আবার ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার বর্জ্য সাফাই করানো হচ্ছে।
এমনিতেই করোনা সংক্রমণের নিরিখে এ রাজ্যের শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। সঙ্গে এখন দোসর ডেঙ্গিও। সংক্রমণ রোধে গোটা জেলা জুড়ে চলছে সচেতনতার প্রচার। কিন্তু গ্রামাঞ্চল ও পঞ্চায়েত এলাকাগুলির এমনই হাল যে, সেখানে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। দত্তপুকুরের নতুনবাজারের বাসিন্দা সুমিত দাস বললেন, ‘‘চার দিকে বর্জ্য জমে এমন অবস্থা যে বাড়ি থেকে বেরোনোই যায় না। দুর্গন্ধে টেকা যায় না।’’
বারাসত-টাকি রোড সংলগ্ন কদম্বগাছি বাজার চত্বরে বহু জায়গায় জমে রয়েছে নোংরার স্তূপ। ফলে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। কিন্তু ওই সব এলাকায় নোংরা ফেলার নির্দিষ্ট ভ্যাট নেই কেন, উঠেছে সে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম পাল বললেন, ‘‘আমরা ভ্যাট তৈরির জন্য জায়গা ঠিক করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দেওয়ায় সেই কাজ থমকে গিয়েছে। সর্বদলীয় বৈঠক করে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।’’
একই অবস্থা বারাসত লাগোয়া অধিকাংশ পঞ্চায়েতেরই। বারাসত ১, বারাসত ২, আমডাঙা ও দেগঙ্গা ব্লকে মোট ৩৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা আছে। অধিকাংশ পঞ্চায়েতে কোনও না কোনও কারণে থমকে রয়েছে ভ্যাট তৈরির কাজ। ছোট জাগুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভ্যাট তৈরির জন্য একটি জায়গা কেনা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় সেই কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি। পঞ্চায়েত প্রধান নুরুল হক বললেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ভ্যাট তৈরির কাজ আটকে রয়েছে। সমস্যা মিটলেই কাজ শুরু হবে।’’
দেগঙ্গা ১ পঞ্চায়েত এলাকার একটি সরকারি জমিতে ভ্যাট তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু দখলদারি সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য সেই ভ্যাট আর তৈরি করা যায়নি। পঞ্চায়েত প্রধান অঞ্জুরা খাতুন বলেন, ‘‘সরকারি জমিতে ভ্যাট তৈরির চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু কিছু মানুষ তা দখল করে বসে আছেন। নতুন করে জমি কিনে ভ্যাট তৈরির মতো অর্থ তহবিলে নেই।’’
প্রতিটি পঞ্চায়েতে ভ্যাট তৈরি করা সম্ভব না হলেও তিনটি পঞ্চায়েতের জন্য একটি করে ভ্যাট তৈরির প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনিক স্তরে। সে বিষয়ে আলোচনাও হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যখন ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ বা ‘নির্মল বাংলা’র মতো প্রকল্পে গ্রামাঞ্চলে এত টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, তখন ভ্যাট তৈরি করতে কী অসুবিধা?
এ বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্করপ্রসাদ পাল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত এলাকায় ভ্যাট না থাকলেও ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে বর্জ্য সাফাইয়ের কাজ চলছে। কঠিন বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করে নষ্ট করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy