কেটে রাখা ম্যানগ্রোভ । নিজস্ব চিত্র
নদীর ও পারে জঙ্গল। এ পারে নদীবাঁধ বরাবর স্তূপীকৃত ভাবে রাখা রয়েছে ও পার থেকে কেটে আনা ম্যানগ্রোভ। রাতের অন্ধকারে ওই কাঠ চলে যাবে বিভিন্ন ইটভাটায়, বিভিন্ন হোটেলের রান্নাঘরে।
রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে বেশ কিছু এলাকায় দিনের পর দিন এ ভাবেই ম্যানগ্রোভ কাটা পড়লেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
নদী-জঙ্গলে ঘেরা ওই ব্লকে ঠাকুরান নদীর পূর্বপারে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে সাহেবের দ্বীপ-জঙ্গল। অদূরে ভুবেনশ্বরী জঙ্গল। আয়লার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে এক সময়ে চর জেগে ওঠা এলাকাগুলিতে পঞ্চায়েতের প্রচেষ্টায় ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। সেগুলি এখন বড় বড় গাছ হয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। রয়েছে কেওড়া, বানি, খলসে। যা নোনা মাটিতে তরতর করে বাড়ে। সমুদ্রের দিক থেকে আসা বড় বড় ঢেউ অনায়াসে সামলে দিতে পারে ওই জঙ্গল। তাতে রক্ষা পায় বাঁধ।
চোরাই কাঠ কারবারিরা ওই অঞ্চলে নিয়ম করে কেটে চলেছে ম্যানগ্রোভ। নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে দমকল চ্যাটার্জি পাড়া, নগেন্দ্রপুর হালদার পাড়া, বরদানগর, পূর্ব শ্রীধরপুর ও পশ্চিম শ্রীধরপুর। গ্রামগুলির শেষে ঠাকুরান নদীটি মেরেকেটে প্রায় ১ কিলোমিটার চওড়া। ও পারেই ঘন সবুজ বন। কাঠচোরেরা দিনের বেলায় নদী পেরিয়ে চলে যায় ওই জঙ্গলে। গাছ কেটে ফেলে রেখে ফিরে আসে। কাটা গাছ আনতে সন্ধ্যায় বা রাতে তারা ফের রওনা দেয় জঙ্গলে। রাতেই নৌকা ভর্তি কাঠ নিয়ে ফেরে গ্রামে।
ওই কাঠই পোড়ানো হচ্ছে ছোট ছোট ইটের পাঁজায়। তাতে ৭-৮ হাজার ইট পোড়ানো হয়। বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছর ধরে চলে ইটের পাঁজা। আবার ওই কাঠই চলে যাচ্ছে রায়দিঘি, কুলতলি, পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন বাজারের হোটেলে। সেখানে রান্নার কাজে লাগছে।
এ দিকে, ১০-১৫ বছর ধরে ম্যানগ্রোভ কেটে নষ্ট করার ফলে নদীবাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। জনবহুল এলাকায় ইটের পাঁজা জ্বালানোয় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জঙ্গল তাঁদের রক্ষা করতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ তা ধংস করেই চলছে ইটের পাঁজা পোড়ানো। ওই কাঠই ব্যবহার করা হচ্ছে জ্বালানি হিসেবেও। চোরা কারবারিদের জন্য জঙ্গলের পর জঙ্গল ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় বাঁধ বাঁচানো দায় হয়ে উঠেছে। ছোটখাটো কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। পুলিশ এবং বন দফতরকে একাধিক বার চোরা কাঠ-কারবারিদের বিষয়ে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন হালদার, ইয়াসিন গাজিদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ও পারে গিয়ে ম্যানগ্রোভ কেটে নিয়ে আসছে চোরাকাঠ কারবারিরা। প্রতিবাদ করলেই হুমকির মুখে পড়তে হয়। সমস্ত বিষয়ে বন দফতরকে জানানো হলেও জঙ্গল পাহারার ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে প্রধান আর্জিনা গাজি বলেন, ‘‘জঙ্গল বাঁচাতে আমরা নিয়মিত মাইকে প্রচার চালাই। কোনও ভাবেই জঙ্গল ধ্বংস করা যাবে না, তা বলা হয়। তা সত্ত্বেও ম্যানগ্রোভ কাটা আটকানো যাচ্ছে না। বিষয়টি বন দফতরকে বলা হয়েছে।’’
বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে একাধিকবার তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে চোরাই কাঠ।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy