শোকার্ত: জয়ন্তের (ইনসেটে) পরিবার। অশোকনগরে। নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গি-জ্বর নিয়ে জেরবার হাবড়া। পাশের এলাকা অশোকনগরেও অনেকে জ্বরে আক্রান্ত। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে জ্বর-ডেঙ্গিতে।
রোগীর চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী থাকছে কয়েকগুণ বেশি। বাধ্য হয়ে এক শয্যায় তিনজন করেও রাখতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর মধ্যে ডেঙ্গি আতঙ্ক আরও বেশি করে ছড়িয়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন বাসিন্দারা। তাঁরা জানালেন, মাঝে মধ্যে পুরসভার তরফে চুন, ব্লিচিং, মশা মারার তেল ছড়িয়ে দায় সারা হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতিতে যে ধরনের তৎপরতা পুর কর্তৃপক্ষের দেখানো উচিত, তা দেখা যাচ্ছে না।
ডেঙ্গিতে মৃত জয়ন্ত পালের বাড়ি পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকায়। তাঁর বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে ঝোপ-জঙ্গল। সেগুলি বুধবার সকালেও পরিষ্কার হয়নি। সেখানে আবর্জনার স্তূপও দেখা গেল। প্লাস্টিক, থার্মোকল থেকে বোতল পড়ে রয়েছে। ইমারতি মালপত্র প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। তার উপরে বৃষ্টির জল জমেছে। এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, অনেকেই জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। মৃত যুবকের এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘পুরসভা ঠিকঠাক কাজ করলে কী আর ঝোপ-জঙ্গল থাকে!’’ এ দিন সকালে অবশ্য পুরসভার কর্মীরা এলাকায় মশা মারার তেল স্প্রে করেছেন। মৃত যুবকের বাড়িতে গিয়েছিলেন পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার। তিনিও ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তা ছাড়া, পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির জল জমে আছে। নিকাশি নালা সাফাই করা হলেও বেশ কিছু নালা আবর্জনায় ভর্তি। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। বাজার, মুদিখানা, মিষ্টির দোকান— সর্বত্রই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার চলছে বলে দেখা গেল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। মানুষও সচেতন নন।
বাসিন্দারা জানালেন, দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রব রয়েছে। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা নিজেরা চুন, ব্লিচিং মশা মারার তেল কিনে বাড়ির চারপাশে ছড়াচ্ছেন। শহরবাসীর অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে পুর এলাকায় বছরের এই সময়ে জ্বর-ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। তবু পুরসভার থেকে আগেভাগে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়নি। অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার যতটা তৎপরতার সঙ্গে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গোলবাজার এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জল জমে যাচ্ছে। যা আগে হত না।’’
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, মশা মারতে নিয়মিত প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা মারার তেল, চুন, ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে রোজ দু’দফায় নিকাশি নালা সাফাই করা ও ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজ চলছে। পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করছেন। পুরপ্রধান নিজে রোজ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গি সচেতনতার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেক বাড়িতে গিয়ে দেখেছি বাড়ির মধ্যে জল জমে। শুধু পুরসভার একার পক্ষে ডেঙ্গি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকারি ভাবে মশা মারার তেল স্প্রে তো করা হচ্ছেই, পুরসভাও নিজস্ব তহবিল থেকে তেল কিনে এলাকায় ছড়াচ্ছে। জ্বর-ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসার জন্য দু’টি শিবিরও চালু করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy