Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
আচার-অনুষ্ঠান পালন হবে মন্দিরেই
Coronavirus

সংক্রমণ ঠেকাতে মাহেশে বন্ধ রথযাত্রা

রথযাত্রার দিন মন্দিরের একটি ঘরে তিন বিগ্রহকে রাখা হবে। সেই ঘরকেই ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবে ধরা হবে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০৬:০৮
Share: Save:

করোনা বন্ধ করে দিল মাহেশের রথযাত্রা। পুরীর পরেই মাহাত্ম্যে মাহেশের রথযাত্রার স্থান। কিন্তু এ বার সেই উৎসব বন্ধ থাকছে। মাহেশের জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ৬২৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম রথে চেপে মাসির বাড়িতে যেতে পারবেন না জগন্নাথ। তাঁর সঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরেই কাটাতে হবে বলরাম এবং সুভদ্রাকেও। তবে দুই মন্দিরে সীমিত সংখ্যক লোক নিয়ে আচার-অনুষ্ঠান হবে। আগামী শুক্রবার স্নানযাত্রা। ২৩ জুন রথ। শনিবার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও মন্দির পরিদর্শনে আসেন। তার পরেই সংবাদিক সম্মেলনে মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের তরফে রথযাত্রা না-হওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন অধিকারী জানান, স্নানযাত্রার দিন মন্দির সংলগ্ন স্নানমঞ্চে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহকে নিয়ে গিয়ে ঘড়া ঘড়া দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। এ বার ওই অনুষ্ঠান মন্দিরের চাতালে হবে। রথযাত্রার দিন মন্দিরের একটি ঘরে তিন বিগ্রহকে রাখা হবে। সেই ঘরকেই ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবে ধরা হবে। দেবতাদের প্রতিভূ হিসেবে সেবাইতরা তিনটি নারায়ণ শিলা মাসির বাড়ির মন্দিরে নিয়ে গিয়ে রাখবেন। উল্টোরথের দিন শিলা তিনটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হবে। সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘এই প্রথম রথের রশিতে টান পড়বে না। করোনার জেরে প্রশাসনের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত। রথযাত্রায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনেই মন্দির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওঁদের আচার-অনুষ্ঠানে আমাদের তরফে সম্পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে। পরিকাঠামোগত কিছু সাহায্য লাগবে, সেটা আমরা দেব।’’ জগন্নাথ জিউ ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অসীম পণ্ডিত জানান, সরকারি বিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যত কম সংখ্যক সম্ভব লোক নিয়ে অনুষ্ঠান হবে। সমাজ, জনগণ এবং ভক্তদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী, পুরসভার প্রশাসক অমিয় মুখোপাধ্যায়ও এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ‌ছিলেন। অমিয়বাবু বলেন, ‘‘প্রশাসন যে ভাবে বলবে, সে ভাবেই উৎসব হবে।’’

রাজ্য সরকার এই দুই মন্দিরকে ঘিরে পর্যটন প্রকল্পের কাজ করছে। লকডাউনের জন্য সেই কাজ এখন বন্ধ। নাটমন্দির, রান্নাঘর ঢালাই হয়নি। ওই চৌহদ্দিতে থাকা বজরংবলি, নিতাই-গৌর, নীলমাধব এবং শিবের চারটি ছোট মন্দিরের কাজও সম্পূর্ণ হয়নি। এ দিন ওই প্রকল্পের কাজ নিয়ে পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন জেলাশাসক।

রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে জিটি রোডের দু’ধারে মেলা বসে। কথিত আছে, ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে জগন্নাথদেবের এক ভক্ত পুরীতে গিয়ে দেবতার দর্শন না পেয়ে মনোকষ্টে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন। ভগবানের স্বপ্নাদেশে তিনি মাহেশে আসেন। ঝড়ঝঞ্ঝার রাতে গঙ্গায় ভাসমান একটি নিমকাঠ পেয়ে তা দিয়ে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বিগ্রহই আজও পূজিত হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা জনপদে সেই সময় জগন্নাথ মন্দির ছিল গঙ্গার ধারে। সেখান থেকে রথ যেত চাতরায় গুন্ডিচাবাটী পর্যন্ত। পরে গুন্ডিচাবাটী চলে আসে বল্লভপুরে। বর্তমানে মাসির বাড়ি মন্দিরে রথ আসে। শ্রীচৈতন্য মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে এসেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ মেলায় এসেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাধারাণী’ উপন্যাসেও এই রথযাত্রার উল্লেখ আছে। ১৮৮৫ সালে শ্যামবাজারের বসু পরিবারের কর্তা কৃষ্ণচন্দ্র বসু বর্তমান লোহার রথ তৈরি করিয়ে দেন। মার্টিন বার্ন কোম্পানির তৈরি রথটির দাম পড়েছিল ২০ লক্ষ টাকা। ভাইরাসের সৌজন্যে বদলে যাওয়া সামাজিক প্রেক্ষাপটে জিটি রোডের ধারে দাঁড়িয়েই এ বার উৎসব কাটবে সেই রথের।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy