বন্ধ মদের দোকান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
এক দল হাহুতাশ করে দিন কাটাচ্ছেন। আর বেশ কিছু মানুষের বক্তব্য, যা হয়েছে বেশ হয়েছে। এই সুযোগে যদি নেশাটা ছাড়ে!
এক দলের বক্তব্য, এ-ও তো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। একেবারে বন্ধ করে দিলে কী করে চলবে? অন্য পক্ষের মত, মোটেও এটা নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু নয়। বরং বহু সংসারে অশান্তি ডেকে আনে নেশা।
কেউ কেউ বলছে, সরকার কত টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। আবার কারও মতে, সরকারের ঘরে রাজস্ব কমল কী বাড়ল না ভেবে নেশার পিছনে টাকা ওড়ানো বন্ধ করে নিজের সংসারে দু’পয়সা সাশ্রয় হচ্ছে কিনা, সেটাই ভাবা দরকার।
লকডাউনে মুদি-আনাজ-মাছ-মিষ্টির দোকানকে ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি মদের দোকান খোলা রাখার অনুমতি থাকবে না কেন, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আর এরই মাঝে মদের কালোবাজারি চলছে রমরমিয়ে। ২০০ টাকার মদ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-১০০০ টাকায়। এমনকী, তুলনায় সস্তার বলে পরিচিত যে বাংলা মদের তেমমন কৌলিন্য নেই সমাজে— সেই বাংলা মদের বোতলও বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ গুণ বেশি দামে। নেশাড়ুদের হাহাকারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাগামছাড়া কালোবাজারি হচ্ছে মদে।
পাশাপাশি উঠছে আরও একটি গুরূত্বপূর্ণ প্রশ্ন, মদের কালোবাজারি অন্য কোনও বড় বিপদ ডেকে আনবে না তো?
কী সেই বিপদ?
এ রাজ্যে বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। প্রতি বছরই জাল মদ এবং বিষাক্ত চোলাই খেয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে সাম্প্রতিক অতীতে সব থেকে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল। বিষমদ খেয়ে ২০১১ সালে মারা যান ১৭২ জন। তাঁদের পরিবারকে সরকার ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় বিতর্কও কম হয়নি।
ডায়মন্ড হারবার শহরে রয়েছে সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত দু’টি মদের দোকান। লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই দোকান বন্ধ। প্রথম কয়েক দিন আড়ালে আবডালে কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়ে মদ কিনেছেন অনেকে। পরের দিনগুলোয় মাথা কুটলেও আর পওয়া যাচ্ছে না মদ।
এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, চোলাই মদের কারবারিরা যদি এই মওকায় ফের ব্যবসা ফেঁদে বসে, তা হলে আবার কোনও মগরাহাট-কাণ্ড অপেক্ষা করে নেই তো!
জেলা আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, সরকারি নির্দেশ মেনে সমস্ত ‘‘দোকান বন্ধ করা হয়েছে। কালোবাজারির কোনও খবর পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’
ক্যানিং, তালদি, বাসন্তীর নানা জায়গায় মদের কালোবাজার চলছে বলে অভিযোগ। মানুষজনের হাতে কাজকর্ম না থাকায় অনেকেই বাড়িতে বসে মদ্যপান করতে পছন্দ করছেন। ফলে চাহিদা বেড়েছে মদের। পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে মদের আসরও বসাচ্ছেন অনেকে। ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকলেও উপরি পাওনার আশায় অনেকেই মদের কালোবাজারি করছেন এমনকী, গ্রামের ছোটখাট মুদির দোকানে বসেও। এঁরা মদের জোগান পাচ্ছেন কোথা থেকে?
জানা গেল, মদ ব্যবসায়ীদের গোডাউনে যা মজুত রয়েছে, তাই বিক্রি করা হচ্ছে গোপনে। বিষয়টি নজরে এসেছে আবগারি দফতরের। কোন দোকানে বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি হচ্ছে, তা তদন্ত করে দেখছেন দফতরের কর্মী ও পুলিশ।
ক্যানিং মহকুমা আবগারি দফতরের আধিকারিক কপিলচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘লকডাউনে সমস্ত মদের দোকান বন্ধ রয়েছে। কারা বেআইনি ভাবে বেশি দামে মদ বিক্রি করছে, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ যাতে বাইরের কোনও দোকান থেকে মদ না কেনেন, সে ব্যাপারে আমরা মানুষকে সচেতন করছি। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল মদ বিক্রি
করতে পারেন। আর তা খেয়ে বিপদ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
বনগাঁ, গাইঘাটা, বাগদার গ্রামে দেদার বিকোচ্ছে দেশি মদ। মদের চাহিদাও বেড়েছে গত কয়েক জিনে। বেশি দা দিয়েও নেশার জিনিস কিনতে দ্বিধা করছেন না অনেকেই। দোকান থেকে কেনা দেশি মদের সঙ্গে ইথাইল অ্যালকোহল, পচা ভাতের জল, বা অন্য কোনও তরল মিশিয়ে অনেক সময়ে বিপদ ডেকে আনে বিক্রেতা। এখন সেই আশঙ্কাও বেড়েছে।
যদিও পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইথাইল অ্যালকোহল এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দেশি মদের সঙ্গে স্পিরিট বা ইথাইল অ্যালকোহলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা শরীরের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
বনগাঁর মুড়িঘাটা, বাগদার আমডোব এলাকায় অতীতে চোলাইয়ের রমরমা কারবার ছিল। পুলিশ, জনপ্রতিনিধিরা লাগাতার চেষ্টা করে সে সব বন্ধ করেন। অভিযোগ, এখন ওই সব এলাকায় ফের দেশি মদের কারবার শুরু হয়েছে। অতীতে ওই সব এলাকায় চোলাই খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফের তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, আশঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে।
বনগাঁর আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির খবর আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা কড়া পদক্ষেপ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy