Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
যত্রতত্র গজিয়েছে বট-অশ্বত্থ, বেরিয়ে পড়েছে জং-ধরা লোহা

সেতুর স্বাস্থ্য ফিরবে কবে, প্রশ্ন

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেতুটির বিষয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে।’’

দুর্বল: এ ভাবেই  দু’টি থাম লোহার পাত দিয়ে কোনও রকমে বেঁধে রাখা হয়েছে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দুর্বল: এ ভাবেই দু’টি থাম লোহার পাত দিয়ে কোনও রকমে বেঁধে রাখা হয়েছে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

দু’পাশে সিমেন্ট-বালির রেলিং। ক্ষয়ে বা ভেঙে গিয়ে পাতলা হয়ে গিয়েছে। পলেস্তারা খসে বেরিয়ে পড়েছে জং ধরা লোহা। থামের গায়ে ফাটল। ভাঙা দু’টি থাম লোহার পাত দিয়ে কোনও রকমে বেঁধে রাখা হয়েছে।

যশোর রোডের উপরে গাইঘাটা বাজার এলাকায় থাকা পুরনো সেতুটির স্বাস্থ্যের অবস্থা এমনই। কিন্তু কয়েক মাস আগে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে বলে সেতুর ভগ্নদশা চট করে বোঝা যায় না। তবে সেতুর শরীরে যত্রতত্র গজিয়ে-ওঠা বট-অশ্বত্থ বলে দেয় শরীর ভাল নেই সেতুর।

বাংলা ১৩৫৭ সালে ‘গাইঘাটা পুল’ নামে ওই সেতুটি তৈরি হয়। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ সেতু এটি। বনগাঁ মহকুমার মানুষকে সড়কপথে যশোর রোড ধরে জেলা সদর বারাসত বা কলকাতায় যেতে হলে ওই সেতুই পেরোতে হয়। সেতুটি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। রোজই পণ্য-ভর্তি হাজার হাজার ট্রাক এই সেতু পেরিয়ে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে যাতায়াত করে। কোনও কারণে সেতুটি ভেঙে পড়লে বা যান চলাচলের অনুপযুক্ত হলে ট্রাক চলাচল থমকে যাবে। বনগাঁ, বাগদা, গোপালনগর গাইঘাটার রোগীদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এই সেতু দিয়েই। স্থানীয় চাষিরা এই পথেই হাটে আনাজ নিয়ে আসেন। সব মিলিয়ে রোজ কয়েক লক্ষ মানুষ সেতুটি ব্যবহার করেন।

এ হেন গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, অতীতে একবার রেলিং মেরামত হয়েছিল। ফের তা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এ বার আর মেরামত করলে হবে না। নতুন করে করতে হবে। রেলিংয়ের থামের অবস্থাও ভাল নয়।’’ এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘অতীতে এখানে নৌকোর পোল ছিল। পরে সেতু হয়। সেতুর অবস্থা এখন খুবই নড়বড়ে।’’ গোপাল মজুমদার নামে স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ‘‘সেতুর অবস্থা বেশ খারাপ। আমরা সব সময়ে আতঙ্কে থাকি, মাঝেরহাটের মতো এই সেতুটিও না ভেঙে পড়ে!’’ গাড়ি চালক শুভঙ্কর রায় বলেন, ‘‘গাড়ি নিয়ে সেতুর উপর উঠতেই ভয় লাগে।’’ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যানবাহন বেপরোয়া গতিতেই ছুটে যাচ্ছে।

সেতুর ভগ্নস্বাস্থ্যের কথা অজানা নয় প্রশাসনিক কর্তাদের। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বললেন, ‘‘সেতুটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ করা না হলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’’ গোবিন্দ আরও জানান, কয়েক মাস আগে জেলার তৎকালীন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য গাইঘাটায় এলে তাঁকে নিয়ে গিয়ে সেতুর ভগ্নদশা দেখিয়েছিলেন তিনি।

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেতুটির বিষয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে।’’

কী বলছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ?

তাঁরা অবশ্য দাবি করছেন, এই সেতু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। রেলিং ছাড়া সেতুটির বড় কোনও সমস্যাও নেই। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, ‘‘যশোর রোডের উপরে যতগুলি সেতু রয়েছে, নিয়মিত সেগুলির স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাইঘাটা সেতুটিতে নতুন করে রেলিং তৈরি করতে পদক্ষেপও করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, আগাছা পরিষ্কার ও ছোটখাটো সংস্কারের কাজও দ্রুত করা হবে। সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের ‘মিনিস্ট্রি অফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট’ দফতরের তরফে বছরে দু’বার সেতুটির ‘ফিজিক্যাল অডিট’ হয়। সূত্রের খবর, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত তা করা হয়নি।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘ক্র্যাশ বেরিয়ার’ ব্যবহার করে সেতুর রেলিং এবং গাড়িগুলির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করা হবে। যাতে কোনও ভাবেই রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা খেতে না পারে গাড়িগুলি।

অন্য বিষয়গুলি:

Gaighata Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy